টানা দুই মাস গাছে বসবাস করতে পারে যে মাছ

মানুষের যেমন রাজ্য আছে মাছেও তেমনি। বিজ্ঞান বলছে মাছেরও রয়েছে আবেগ অনুভূতি। মাছ নিয়ে ভাবতে গেলে স্বাভাবিকভাবে কিছু ধারণা আমাদের মাথায় চলে আসে। আর স্বাভাবিকভাবেই বাবা-মার অধিকাংশ গুন এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে সেই বাচ্চা মাছটি ধীরে ধীরে প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠে। এরপর সময়ের হিসেব অনুযায়ী একদিন সেই বাচ্চা মাছটিও বুড়ো হয়ে যায়।

মাছ পানিতে থাকে এবং নিঃশ্বাস গ্রহন করে তাদের ফুলকার মাধ্যমে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে ‘a fish out of water’ নামে। এই প্রবাদটি দিয়ে কোনো কিছুর বিচিত্র অবস্থা বোঝানো হয়।

যেমন ধরা যাক, স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মাছ পানিতে থাকে কিন্তু যদি মাছ পানি ছাড়াও বাঁচতে পারতো তাহলেই এই প্রবাদটি বলা হতো। তবে, আর যাই হোক পানি ছাড়া যে মাছ বাঁচতে পারে না এটা চিরসত্য ব্যাপার। যদিও এতক্ষন আমরা যে গড়পড়তা নিয়মকানুনের কথা বললাম তা সকল মাছের ক্ষেত্রে খাটলেও একদল মাছের ক্ষেত্রে কিছু খাটে না।

এই মাছেদের সচরাচর মানুষ কিলফিস নামেই চেনে। দেখতে মাত্র কয়েক ইঞ্চি আয়তনের এই মাছগুলোর একটি প্রজাতিকে আমরা বিভিন্ন অ্যকুরিয়ামে দেখতে পাই এবং এদের দেখতেও খুব একটা বিচিত্র মনে হয় না। তবে মৎস্যবিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মাছেদের তালিকায় এই মাছ অন্যতম।

কিন্তু এই মাছটি অন্য মাছেদের থেকে ভিন্ন হওয়ার কিছু কারণ আছে। এরমধ্যে অনত্যম হলো এদের প্রজনন প্রক্রিয়া। অধিকাংশ কিলফিসই অন্যান্য মাছেদের মতো প্রজনন করে না। জন্মগ্রহনের পর সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যেই এরা মারা যায়। কিন্তু স্বাভাবিক হিসেব অনুযায়ী একটি কিলফিস জন্মানোর তিন মাস পরেই মারা যায়।

অন্যান্য মাছেদের মতো কিলফিস শুধুমাত্র ফুলকার সাহায্যেই নিঃশ্বাস গ্রহন করে না। এছাড়াও অন্য মাছেরা যেমন পানিতে সাতার কাটে, কিলফিসেরা সেখানে সাতার কাটার বদলে ঘোলা পানি অথবা কাদার মধ্যে ডুবে থাকতেই পছন্দ করে। এমনও দেখা গেছে যে, কিলফিসদের কিছু প্রজাতি পানি ছাড়া টানা দুই মাসও বাঁচতে পারে। শুধু তাই নয় অনেক কিলফিস পানি থেকে ডাঙ্গায় ওঠে শিকারও করে থাকে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো কিছু কিলফিসকে গাছে বাস করতেও দেখা গেছে।

মূলত আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে কিলফিসদের বসবাস। অগভীর পানি এবং যে অঞ্চলের পানি বিভিন্ন ঋতুতে ধারাবহিকভাবে পরিবর্তিত হয় সেখানেই এই মাছেরা বাস করে। কিন্তু কিলফিসদের কিছু প্রজাতি আবার গভীর পানিতে বাস করতে পছন্দ করে। তবে সেই গভীরতার মাঝেও তারা কাদা এবং ঘোলাটে পরিস্থিতিকে বেছে নেয় জীবনযাপনের জন্য।

আর এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের যে, কিভাবে কিলফিস এরকম অগভীর পানিতে বাস করে এবং প্রজননের মতো জটিল কাজটি সামাধা করে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বায়োলজিকাল জার্নালে এই মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সেখানে দেখানো হয় যে, মূলত বর্ষা মৌসুমে যখন পানির আধারগুলো পূর্ণ থাকে তখনই কিরফিসেরা ডিম পারে এবং পানির আধার শুকিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত তারা এই কাজ করতে থাকে।

কিলফিসেরা মাত্র এক বছরের জীবন চক্রে বাধা থাকলেও মৃত্যুর আগে তারা মাটির তলায় রেখে যায় তাদের ডিম। এবং এই ডিমগুলো থেকে পরবর্তী বর্ষার ঋতুতে বাচ্চা বের হয়ে সেই একই জীবন চক্রের ভেতর দিয়ে যায়।



মন্তব্য চালু নেই