শিবগঞ্জে অভিযান চলছে, মুহুর্মুহু গুলি-বিস্ফোরণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান শুরু করেছে সোয়াট। অভিযানের পর ওই এলাকায় গুলির মুহুর্মুহু শব্দ শোনা গেছে। ওই গুলির শব্দের মধ্য বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে।

এদিকে এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইগল হান্ট’।

আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন। বাড়ির মালিকের ছেলে ও আবুর মা এমনটাই বলেছেন। আবুর পরিবার ছাড়াও বাড়িতে আরও দুজন থাকতে পারেন বলে পুলিশের ধারণা।

এর আগে বিকেলে আবুকে ফিরে আসার জন্য তাঁর মা ও পরিবারের সদস্যরা আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ওই বাড়ি থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বিকেলে আবুর চাচি চামেলি বেগম, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রুনা বেগমকে নিয়ে তাঁর মা ওই বাড়ির দরজার সামনে যান। এ সময় মাইকে তাঁরা আবুকে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। বেশ কয়েকবার আহ্বান জানানোর পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তাঁদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। এরপরেই সন্ধ্যায় ‘ইগল হান্ট’ নামে অভিযান শুরু করে সোয়াট।

ঘটনাস্থল থেকে জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের শুরুর পরে ওই বাড়ির ভেতরে দুটো বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে বাড়িতে থাকা ব্যক্তি।

এ অভিযানের নাম ‘ইগল হান্ট’ বলে জানান, টি এম মোজাহিদুল ইসলাম। পুলিশ সদস্যরা জানান, ওই বাড়ির দেয়াল ভেঙে অভিযান শুরু হয়েছে।

এর আগে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সোয়াট।

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে আজ সকাল ছয়টা থেকে ত্রিমোহনী শিবনগর ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা বজায় থাকবে। বিষয়টি এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, ঘিরে রাখা বাড়িটির মালিক সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস।

সাইদুরের ছেলে আনারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তাঁদের বাড়িটি ফাঁকা পড়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে পরিবার নিয়ে বাড়িটিতে ওঠেন আবু। ভাড়ার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামেরই বাসিন্দা আবু। ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে তাঁদের বাড়ি। তাঁর বাবা আফসার আলী। মা ফুলসানা বেগম।

মা ফুলসানা বেগমের ভাষ্য, তাঁদের সঙ্গে আবু ও তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণে আবু পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়েন।

ফুলসানা বেগম জানান, প্রায় আট বছর আগে সুমাইয়ার সঙ্গে আবুর বিয়ে হয়। আবু হাটে-বাজারে মসলা বিক্রি করতেন। ত্রিমোহনী বাজারে তাঁর একটা দোকানও আছে।

ফুলসানা বেগমের ভাষ্য, তাঁদের সঙ্গে আবু ও তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। আবুর চলাফেরা ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালন নিয়ে বাবা আফসারের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে আবু শিবগঞ্জের আব্বাস বাজার এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। আবু সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন করতেন।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির ভাষ্য, আবু ত্রিমোহনী আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। স্থানীয় ৮-১০ জন ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করতেন তিনি। অন্যদের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা আলাদাভাবে নামাজ পড়তেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান ওরফে মোহন (২৮) ও আবদুস সালাম (৩৫) নামের দুজনকে গতকাল মঙ্গলবার রাতে শিবনগর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তবে তাঁদের আটক করার বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, সাইদুরের বাড়িতে ওঠার কিছুদিন আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে আসেন আবু। কিন্তু বাবার সঙ্গে ফের বিরোধ দেখা দেওয়ায় সাইদুরের বাড়িতে ওঠেন।

সাইদুরের ছেলে আনারুল বলেন, এলাকার ছেলে হিসেবে আবুকে বাড়িটি ভাড়া দেন তাঁরা। আজ ভোররাতে বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলাম বলেন, বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

অভিযানে থাকা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঘিরে রাখা বাড়িতে আবু, তাঁর স্ত্রী, দুই শিশুসন্তান আছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। ভেতরে আরও দুজন থাকতে পারেন। বাড়িটি ঘিরে ফেলার পর পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়েছে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট ঘটনাস্থলে আসার পর চূড়ান্ত অভিযান শুরু হবে।



মন্তব্য চালু নেই