এক মার্কিন বধূকে নিয়ে দুই সিলেটি স্বামীর টানাটানি!

আমেরিকান বধূ রোহিনা এখন জেল-হাজতে। একসঙ্গে দুই স্বামীর সংসার করা রোহিনার ছলনার কথা সিলেট জুড়ে। রোহিনার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন তার এক স্বামী রাসেল আহমদ। এর আগে রোহিনার আরেক স্বামী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেছিলেন রোহিনার পিতা নইম উদ্দিন।

আমেরিকান প্রবাসী রোহিনা বেগম। বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বগাইয়া গ্রামে। বাসা সিলেট নগরীর উপশহরে। রোহিনার আপন চাচাত ভাই রাসেল আহমদ। তিনি বসবাস করেন নিজ বাড়ি গোয়াইনঘাটের বগাইয়া গ্রামে। আর রোহিনার তালতো ভাই কামরুল ইসলামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের খাটখাই গ্রামে। কামরুল রোহিনার বড় ভাই শিবলু আহমদের সম্পর্কে শ্যালক।

ঘটনার সূত্রপাত চার মাস আগে। আমেরিকা থেকে রোহিনাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসেন পিতা নইম উদ্দিন। এ সময় রোহিনার মা ও ভাবি দেশে আসেন। তারা নগরীর উপশহরের বাসায় উঠেন। দেশে আসার পর রোহিনার বড় ভাই পাত্রী পছন্দ করে বিয়ে করেন। এরপর আসে রোহিনার পালা। নইম উদ্দিন নিজের স্বজনদের সঙ্গে রোহিনার বিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু সাড়ে ৩ মাস আগে রোহিনা বেগম তারই আপন তালতো ভাই গোলাপগঞ্জের কামরুল ইসলামের সঙ্গে গোপনে ঘর ছাড়ে। কামরুলকে বিয়েও করে।

এরপর তারা অজ্ঞাত স্থানে বসবাস করে ঘর সংসার করছিলেন। কিন্তু রোহিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ক্ষুব্ধ হন পিতা নইম উদ্দিন। তিনি রোহিনাকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে থানা-পুলিশ দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন এসে এতে হস্তক্ষেপ করে। ওই সময় আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন রোহিনার বড় ভাই ও কামরুলের বোনের জামাই শিবলু আহমদ।

পরে অপহরণ মামলা প্রত্যাহার করা হবে মর্মে সমঝোতার মাধ্যমে রোহিনা ফিরে আসে পিতা নইম উদ্দিনের কাছে। ১৩ই মার্চ রোহিনা সিলেটে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে কামরুলকে ডিভোর্স দেন। ওই ডিভোর্সে রোহিনা স্বীকার করেছেন- ‘কামরুল আমাকে ভুল বুঝিয়ে সাদা স্টাম্পে দস্তখত নেয়। সে আমার ক্ষতির জন্য গত ১২ই ডিসেম্বর জোরপূর্বক হলফনামায় স্বাক্ষর নেয়।’

রোহিনার ডিভোর্সের পত্র কামরুলও গ্রহণ করেন। এখন নতুন করে তার বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়। নতুন বর তারই আপন চাচাতো ভাই রাসেল আহমদ। পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ের কথা বার্তা চূড়ান্ত হয়। দুই পরিবারের সম্মতিতে নইম উদ্দিন গত ২২শে মার্চ রোহিনাকে তার আপন ভাতিজা রাসেলের সঙ্গে নগদ ১০ লাখ টাকা মোহরানা সাব্যস্ত করে বিয়ে দেন। আর ওই বিয়ের পর পরই রোহিনার পিতা নইম উদ্দিন সিলেটের কোতোয়ালি থানায় কামরুল ও তার পরিবারের লোকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অপহরণ মামলা প্রত্যাহার করে নেন।

রাসেলের স্বজনরা জানিয়েছেন- রাসেল ও রোহিনার বিয়েতে সব আত্মীয় স্বজন উপস্থিত ছিলেন। দুটি গরু জবাই করে গ্রামের লোকজনকেও দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হয়। এছাড়া বিয়েতে রোহিনাকে ৮ ভরি স্বর্ণালংকার দেয়া হয়। রাসেলের সঙ্গে রোহিনার বিয়ের পর নইম উদ্দিন স্ত্রী, সন্তানসহ সবাইকে নিয়ে আমেরিকা চলে যান। ওদিকে রাসেল ও রোহিনার সাংসারিকপর্ব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ফন্দি আটেন কামরুল ইসলাম। তিনি রোহিনাকে তার নিজের স্ত্রী দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হন।

কামরুল আদালত থেকে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে ৪ঠা এপ্রিল ছুটে যান গোয়াইনঘাট থানায়। সেখান থেকে পুলিশ নিয়ে তিনি হানা দেন রাসেলের বগাইয়া গ্রামের বাড়িতে। ওই দিনই বিকালে রোহিনাকে পুলিশ রাসেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। ৫ই এপ্রিল পুলিশ রোহিনাকে জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করে। আদালতে কামরুলের আইনজীবী রোহিনাকে দাবি করেন কামরুলের স্ত্রী আর রাসেলের আইনজীবী রোহিনাকে দাবি করেন রাসেলের স্ত্রী হিসেবে।

এ সময় আদালতে উভয়পক্ষই তাদের স্বপক্ষের কাগজপত্র উপস্থাপন করেন। ফলে রোহিনাকে নিয়ে টানাটানি শুরু হওয়ায় আদালত রোহিনাকে পাঠিয়ে দেন সিলেটের বাগবাড়িস্থ নিরাপত্তা হেফাজতে। জুডিশিয়াল আদালতের পর কামরুল রোহিনাকে আদালত থেকে ছাড়িয়ে নিতে জজ আদালতে আপিল করেন। বৃহস্পতিবার সিলেটের জজ আদালতেও রোহিনাকে নিয়ে শুনানি হয়। ওই আদালতও রোহিনাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন- আদালতে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা রোহিনার তিনটি পাসপোর্টের ফটোকপি দাখিল করেছেন। এরমধ্যে দুটি পাসপোর্ট আমেরিকার এবং একটি বাংলাদেশের। রোহিনা এবার দেশে এসে এই পাসপোর্ট তৈরি করে। এ কারণে রোহিনাকে নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় আদালত তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রেখে দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবীরা।

রোহিনার স্বামী রাসেল আহমদ ১২ই এপ্রিল সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় রোহিনাসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে গোলাপগঞ্জের খাটখাই গ্রামের মোশাহিদ আলীর ছেলে কামরুল ইসলামকে। এছাড়া, মামলায় রোহিনার বড় ভাই শিবলু আহমদ, তার স্ত্রী লাকী বেগমকেও আসামি করা হয়েছে।

রাসেল আহমদ গতকাল জানিয়েছেন- ‘রোহিনা ও আমার বিয়েতে কামরুল ইসলাম নিজেও উপস্থিত ছিলো। সে তখন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু রোহিনার পিতা আমেরিকা চলে যাওয়ার পর সে কূটকৌশল শুরু করে।’ তিনি বলেন- ‘রোহিনা কামরুলকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করেছে। সুতরাং রোহিনার বৈধ স্বামী এখন তিনিই।’



মন্তব্য চালু নেই