ধামাচাপা দিতে মরিয়া প্রভাবশালীরা
চেক জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস ! টাকা ফেরত
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি কৃষি ব্যাংক থেকে উপজেলা পরিষদের সঞ্চয়ী হিসাবের চেক জালিয়াতির খবর প্রকাশের পর জেলাব্যাপী ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। খবর প্রকাশের পর ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় একটি মহল জালিয়াতি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছেন, সেই জালিয়াতি করা চেকটির বৈধতা পাচ্ছে এবং উক্ত একাউন্টে উত্তোলনকৃত ৭৭ হাজার টাকা সমন্বয় করতে ইতিমধ্যে জমা প্রদান করা হয়েছে। এসকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে জালিয়াতি চক্র, ব্যাংক ও উপজেলা পরিষদ সাংবাদিকদের মিথ্যা ও অসম্পন্ন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে জনমনে উদ্ভুত প্রশ্ন জনসম্মুখে তুলে ধরতে এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল।
কেন থানায় জিডি হলো: উপজেলা পরিষদের চেক বই সংরক্ষণ থাকে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সুপার মনিরুজ্জামানের নিকট । হিসাবটি পরিচালিত হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের যৌথ স্বাক্ষরে। ফলে কোন বিল প্রদান করার ক্ষেত্রে অফিস সুপার নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর গ্রহন শেষে ফাইলটি প্রদান করেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার- কাম- কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল ওরফে নয়নের নিকট। আর এ ফাইলটি উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর শেষে অফিস সুপারের নিকট আসলেই ধরা পড়ে একটি চেকের পাতা গায়েবের ঘটনা। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসানের সাথে অফিস সুপার মনিরুজ্জামান পরামর্শ করে এবং ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে গত ৬ মে বালিয়াকান্দি থানায় ২০২ নম্বর জিডি করে।
কৃষি ব্যাংক ম্যানেজারের মিথ্যাচার: কৃষি ব্যাংকের বালিয়াকান্দি শাখা ব্যবস্থাপক এ,এস,এম জাকারিয়া নিজের গা বাচাঁতে তিনি সাংবাদিকদের নিকট মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করার অপচেষ্টা চালান। তিনি উপজেলা পরিষদের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলনের দিন গত ৫ মে ছুটিতে ছিলেন বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করার চেষ্টা ও ব্যাংক অভ্যন্তরের কোন কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের কোন কর্মকর্তা বিষয়টি তাকে অবগত করেননি বলে ঢালাও ভাবে মিথ্যাচার করেন। সরকারী অর্থ জালিয়াতি সংক্রান্ত ঘটনাকে গড়ান ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ওই দিন দায়িত্বে থাকা আনোয়ারা বেগমের উপর। তিনি এভাবেই দায় এড়িয়ে যান ও সাংবাদিকদের সাথে মিথ্যাচার করেন।
কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আনোয়ারা বেগমঃ ব্যাংকে বিভিন্ন কাজে আসা ব্যক্তি ও গ্রাহকদের মতে, তিনি একজন ভদ্র, বিনয়ী ও বয়স্ক অফিসার। তিনি ব্যাংক সংক্রান্ত কাজে সবাইকে সম্ভাব্য সেবা দ্রুত দেয়ার চেষ্টা করেন। সেদিনে উপজেলা পরিষদের ৭৭ হাজার টাকার চেকটি তিনিই অনুমোদন দেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের চেক হওয়ায় তিনি দ্রুত চেক ছেড়ে দেন। চেকের বিপরীতে নগদ ৭৭ হাজার টাকাও প্রদান করেন জনৈক রফিকুল ইসলাকে। তবে তিনিও সাংবাদিকদের নিকট তথ্য গোপনের চেষ্টা করেন।
৭৭ হাজার টাকার চেকের হাতের লেখাটি কার: চেক জালিয়াতির ঘটনার পর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চেক নিয়ে ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলনকারী রফিকুল ইসলাম ও চেকে হাতের লেখাটি কার বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চলে। অনুসন্ধান কালে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নের হাতের লেখা ও সেই ঘটনার সাথে জড়িত বলে নাম অফিসারদের ও সাধারন মানুষের মুখে মুখে প্রকাশ পায়। তবে কে এই রফিকুল ইসলাম তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও চেকের পিছনে দেওয়া মোবাইল নং-০১৭১৪-৬৫২২২৭ কক্সবাজারের হোটেল সীগালের এক কর্মচারীর। তাহলে এই রফিকুল ইসলাম কে? সে কি অধরা থেকে যাচ্ছে।
কেন কৃষি ব্যাংকে ৭৭ হাজার টাকা জমা হলো: সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানাগেছে, গত ৭ মে কৃষি ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখার উপজেলা পরিষদের সঞ্চয়ী হিসাব ৪৬৭৪ নম্বরে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নের ভাই সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন কলেজের প্রভাষক আল বাসেত খোকন ৭৭ হাজার টাকা জমা প্রদান করেছেন। ওই জালিয়াতি করা ৭৩০৫৮৫০ নম্বর চেকে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পুনরায় স্বাক্ষর গ্রহন করা হয়েছে বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিঃ জিডির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন বালিয়াকান্দি থানার এস,আই শহিদুল ইসলাম। বিষয়টি অধিক তদন্তের স্বার্থে ও জড়িতদের চিহিৃত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান গত ৭ মে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলামকে প্রধান ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলাম এবং উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ এহিয়াতুজ্জামানকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
পত্রিকায় কেন নয়নের নাম: ইতিমধ্যেই চেক জালিয়াতির হোতা হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নের নাম প্রকাশিত হয়েছে ১০ মে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিড়া: গত ৩দিন ধরে সাংবাদিকরা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, ব্যবসায়িক, রাজনীতিবিদদের প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে হাতের লেখা কার, ব্যাংকে টাকা জমা দিল কে, জিডি কেন হলো, অপরাধী কি সনাক্ত হবে, ঘটনা ধামাচাপা পড়বে কি না, কে এই রফিকুল ইসলামসহ নানা রকম কথা। তাদের দাবী পুর্বেও কি এধরনের ঘটনা ঘটেছে কি? তদন্ত কমিটি এ ঘটনাসহ পুর্বের বিষয়গুলো তদন্ত পুর্বক অপরাধী সনাক্ত করে জনসম্মুখে প্রকাশের দাবী জানিয়েছেন।
ফেসবুক ষ্ট্যাটার্স: মুহাম্মদ আল কামাল নয়ন তার ফেইসবুকে একটি ষ্ট্যাটার্সে লিখেছেন, একটি আতœহত্যাই আমার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে।
তদন্ত কমিটির প্রধানের বক্তব্য: উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান গঠিত ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার সকালে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলাসহ কার্যক্রম গতিশীল করা হবে। তবে ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
মন্তব্য চালু নেই