যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন

কী আছে ওবামার ভাগ্যে?

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন ৪ নভেম্বর। এ নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বার্তা নেই। তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। এ কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনেকটাই রিপাবলিকানদের অনুকূলে।

প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মধ্যবর্তী নির্বাচনে সেখানে তাদের আসন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবধানটা কম রাখার জন্য ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচারণা চলছে।

কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে রিপাবলিকান দল। পরিস্থিতি এমন হলে মেয়াদের শেষ বছর দুটি ওবামাকে আরও বেশি বৈরিতার মুখে পড়তে হবে।

কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয় নিয়ে খোদ রক্ষণশীলরাই সন্দিহান।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা লক্ষ্য করা যায়নি। রিপাবলিকানদের মূল প্রচারণা ওবামাকে ঘিরে।
তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা ওবামার এখন ক্রান্তিকাল চলছে। অর্ধেকেরও বেশি জনমত এখন তাঁর বিপক্ষে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির সাম্প্রতিক সাফল্যের বার্তাটি সাধারণ জনগণের কাছে এখনো পৌঁছায়নি। আবাসনশিল্পে চাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। মধ্যবিত্তের জীবনমানের উন্নতির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দেশটির মধ্যবিত্তরা মনে করছেন, তাঁরা ভালো নেই।

শিক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রহণ করা ঋণের ওপর সুদ বেড়েছে। ওবামা কেয়ারের মতো সর্বজনীন বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বিমা প্রভৃতি নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক।

বিদেশনীতি নিয়েও আছে প্রশ্ন। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানসহ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে মার্কিনিরা উদ্বিগ্ন।

রক্ষণশীলদের অবিরাম প্রচারণায় সাধারণ নাগরিকেরা বিভ্রান্ত। সবকিছুর জন্যই ওবামার ভ্রান্ত নীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাঠে ওবামার নাম নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, রক্ষণশীলদের ৬১ শতাংশই ওবামাবিরোধিতার জন্য প্রার্থীদের ভোট দেবেন।
রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারি ব্যয় হ্রাস, স্বল্প রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, ওবামা কেয়ারের পরিবর্তন, সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়গুলোকেও নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ে আসা হয়েছে।সব মিলিয়ে পুরো প্রচারণায় ওবামার বিরোধিতা এখন তুঙ্গে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে রিপাবলিকান দলের বিবৃতিতে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ব্যর্থ প্রেসিডেন্টের সমর্থক ও অনুসারী বলে রিপাবলিকান দলের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় হলেও রিপাবলিকান দলের অতি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই।

অভিবাসন সংস্কার আইন, অবৈধদের বৈধতা প্রদানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অভিবাসী গোষ্ঠীগুলো অনেকটাই উদ্দীপনাহীন। তারা রিপাবলিকানবান্ধব হয়ে উঠবে বলে ভাবা যাচ্ছে না।

তা ছাড়া মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে রিপাবলিকান দল। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দলে এখন পর্যন্ত সর্বসম্মত গ্রহণযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই।

অপর দিকে চলমান রাজনৈতিক বিতর্ক ও ওবামার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে হিলারির অবস্থান এখন অনেকটাই সংহত।

জনমত জরিপে ৫৩ শতাংশ লোক এখন প্রেসিডেন্ট ওবামার বিপক্ষে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ শতাংশ লোকজনের মনোভাব আবার রিপাবলিকান দলের বিপক্ষে।

ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে হারার আগেই নানা সব বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। মুখে কিছু না বলা হলেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে সম্ভাব্য পরাজয়ের জন্য ওবামার ধসে পড়া জনপ্রিয়তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।

খাঁটি উদারনৈতিক মহলের মতে, রিপাবলিকানদের নেতিবাচক প্রচারণার জুতসই জবাব দিতে পারেনি ডেমোক্র্যাট দল। রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তের জীবন-সমস্যাকে নির্বাচনী বিতর্কে নিয়ে আসা হয়নি। নারী ভোটার, নতুন ভোটার ও অভিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্দীপনা সৃষ্টি করা হয়নি।

বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য জয় ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ নির্বাচনে জয়ের স্বস্তি নিয়ে রিপাবলিকানরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। অপর দিকে ডেমোক্র্যাটরা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাঠে নামবে।



মন্তব্য চালু নেই