ঋণের ভারে জর্জরিত ট্রাম্প

প্রকাশ্যে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে একসময়ে মার্কিন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি খুব ধনী’। আসলে তার এই চাকচিক্যময় জীবন যাপন, মার্বেলে মোড়ানো হোটেল কিংবা কয়েক লাখ ডলারের সম্পত্তি যাই বলুন না কেনো সবই আর পূর্বসূরিদের দান। সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব সংক্রান্ত নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ট্রাম্পের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ৬৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। যদিও ট্রাম্পের দাবি ছিল, এই অর্থের অর্ধেকেরও কম পরিমাণ ঋণে তিনি দায়গ্রস্থ।

ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের সিএফও অ্যালেন উইসেলবার্গ আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ট্রাম্পের এসব ব্যবসা পারিবারিকভাবে পরিচালিত হয়। রিপাবলিকান এই নেতা এসব প্রতিষ্ঠানের একজন অংশীদার মাত্র। সীমিত দায় কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী এসব ঋণের খুব সামান্য দায়ই তার ওপর বর্তায়।’

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ম্যানহাটনে ট্রাম্পের অফিস ভবনকে ৯৫ হাজার কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে বিশ্বের দুটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব চায়না এবং গোল্ডম্যান স্যাকস। যদিও ট্রাম্পের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে কাজের সুযোগ পেলেও উপযুক্ত কর এবং শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করছে না চীন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন স্পিকিং ফি বাবদ গোল্ডম্যান স্যাকসের কাছ থেকে ছয় লাখ ৭৫ হাজার ডলার নিয়েছে।

ট্রাম্পের সম্পদের উল্লেখযোগ্য অংশের মালিকানায় রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এসব সম্পদের মূল্য প্রায় দুইশ কোটি ডলারেরও বেশি। এর একটি অংশে রয়েছে ম্যানহাটনের সিক্সথ অ্যাভিনিউ অফিস ভবন। যদি এসব ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় ট্রাম্প তাহলে সম্পদের মূল্যে রাতারাতি ধস নামবে। যদিও ট্রাম্প যতোই দাবি করুন, এখানে তার দায় সীমিত, কিন্তু এসবের প্রভাব অবশ্যই পরবে।

বিলিনিয়ার ও ক্লিনটন সমর্থক ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘অনুসন্ধানী এসব প্রতিবেদন ট্রাম্প বারবারই অস্বীকার করে আসছেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাম্প কেন তার আয়কর বিবরণী দাখিল করছেন না, যদি সেটা নিরীক্ষিত প্রতিবেদন হয়?’

ট্রাম্পের মালিকানাধীন সীমিত দায় প্রতিষ্ঠান দুইশ কোটি ডলারের ঋণের দায়ে বন্ধ হয়েছে এমন তথ্যও সরকারের কাছে রয়েছে।

সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি ঋণের রাজা’।

নিয়ন অনুযায়ী ফেডারেল ইলেকশন কমিশনের (এফইসি) প্রকাশিত ফরমে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে তার সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। তবে ওই ফরমে প্রার্থীর কর্পোরেট ঋণ সম্পর্কে জানানো বাধ্যতামূলক নয়। ওই বিবরণীতে ট্রাম্প জানিয়েছেন তার কোন ব্যক্তিগত ঋণ নেই। এমনকি যেসব ক্ষেত্রে প্রার্থী কোন প্রতিষ্ঠানের শতভাগের সত্ত্বাধিকারী নয়, সেখানে প্রতিষ্ঠানের ঋণ সম্পর্কে জানানো তার দায়িত্বও নয়।

নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এফইসি-র এসব তথ্য প্রকাশের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইথিকস বিভাগ পর্যালোচনার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব তথ্যের যথোপযুক্ততা যাচাইয়ের জন্য নিরীক্ষার কোন নিয়ম নেই।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাম্পের প্রচার দলের পক্ষে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।



মন্তব্য চালু নেই