কলকাতায় বসেই গুলশান হামলার পরিকল্পনা!

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় জঙ্গি হামলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিম চৌধুরী ওরফে সুলেইমান কলকাতা সফর করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই দাবি করেছে, ভারতে আটক এক সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সদস্য আবু মুসা। কলকাতায় অবস্থানকালেই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ভারতের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মতে, ওই আটক সন্দেহভাজন আইএস সদস্যের বক্তব্যের মাধ্যমে একটি বিষয় সামনে আসে যে, আইএস এবং জেএমবি আঞ্চলিক জঙ্গিবাদের প্রসারে ভারতকে লুকিয়ে থাকার নিরাপদ স্থান বলে মনে করছে।

ভারতে আটক সন্দেহভাজন আইএস সদস্য মোহাম্মদ মশিউদ্দিন ওরফে আবু মুসা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড এবং ১ জুলাই গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিম চৌধুরী। রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তামিম চৌধুরীর জড়িত থাকার দাবি এবারই প্রথম সামনে এসেছে। উল্লেখ্য, মুসা একজন ভারতীয় নাগরিক।

মুসার ভাষ্যমতে, তামিম চৌধুরী এবং জেএমবি ও আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দেখা হয় পশ্চিমবঙ্গে। তারা আমার সঙ্গে মালদা স্টেশনে দেখা করে। এরপর তারা কলকাতায় ফিরে গিয়ে একটি হোটেলে অবস্থান করে।

মুসা তদন্তকারীদের আরও জানিয়েছে, রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর তামিম চৌধুরী তাকে কলকাতায় আসা বিদেশিদের ওপর ‘লোন উলফ’ হামলা চালাতে বলেছিল।

মুসার এই বক্তব্যে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাজ আরও বেড়ে গেলো বলে মনে করা হচ্ছে। গুলশান হামলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’রা যে সময়ে কলকাতায় অবস্থান করছিল, তাতে গোয়েন্দাদের ধারণা, কলকাতায় বসেই ওই জঙ্গি হামলার ছক কষা হয়ে থাকতে পারে। ওই তৃতীয় ব্যক্তির খোঁজ করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালক এ.কে.এম শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, “গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিম চৌধুরী গ্রেফতার এড়াতে ভারতে আত্মগোপন করে থাকতে পারে, এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে আমরা সতর্ক করেছি।”

তিনি আরও বলেন, ‘তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মূল ব্যক্তি হতে পারে।’ তবে এখনও পর্যন্ত জঙ্গি হামলাগুলোয় আইএস-এর কোনও সংযুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তামিম চৌধুরীর বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) এবং সিবিআই-কে সতর্ক করেছে।

উল্লেখ্য, আইএস তামিম চৌধুরীকেই বাংলাদেশে আইএস-এর প্রধান বলে দাবি করেছে। আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকেই বাংলাদেশে আইএস প্রধান আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে তিনি কানাডা ছাড়েন। অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী এবং আইএস-এর সঙ্গে তার সংযোগ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। চলতি বছরে আইএস-এর কথিত প্রপাগান্ডা ম্যাগাজিন দাবিক-এ তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তামিম জেএমবি-র একাংশের প্রধান। যা নিও-জেএমবি নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। অপর অংশের নেতৃত্বে আছে সাইদুর রহমান।

সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আবু মুসার বক্তব্যের পর ভারতীয় কর্মকর্তাদের ধারণা, আইএস এবং জেএমবি আঞ্চলিক জঙ্গিবাদের প্রসারে ভারতকে লুকিয়ে থাকার নিরাপদ স্থান বলে মনে করছে। তারা জঙ্গিদের ছবি এবং অন্যান্য তথ্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

মুসার বরাত দিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছে, জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরী ভারতে ভিন্ন নামে (সুলেইমান) পরিচিত। আর সে ব্যক্তিগতভাবে রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আইএস-এর কথিত সংবাদমাধ্যম আমাক এজেন্সি ওই হত্যাকাণ্ডের পর দায় স্বীকার করে দাবি করেছিল, ওই শিক্ষক নাস্তিক্যবাদের আহ্বান জানিয়েছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডেকান ক্রনিকলস।



মন্তব্য চালু নেই