আফগানিস্তানে আকস্মিক সফরে ওবামা

আফগানিস্তানে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ মার্কিন সেনাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের একটি সম্মানজনক সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রোববার আফগানিস্তানে আকস্মিক সফরকালে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

আফগানিস্তানে এটি ওবামার চতুর্থ সফর।

ওয়াশিংটন থেকে বিশেষ বিমানে সরাসরি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বাইরে বাগরাম বিমানঘাঁটিতে যান ওবামা ৷ অপ্রাত্যাশিতভাবে প্রেসিডেন্টের দেখা পেয়ে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছাসে ফেটে পড়ে সেনারা।

প্রেসিডেন্ট ওবামা রোববার রাতে বাগরাম ঘাঁটিতে ভাষণ দেয়ার সময় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে ভূমিকার জন্য মার্কিন সেনাদের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি আহত সেনাদের জন্য উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ারও অঙ্গীকার করেন। তার এ ঘোষণায় উল্লাসে ফেটে পড়ে সেনারা।

সেনাদের উদ্দেশ্য করে প্রেসিডেন্ট বলেন,‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ আফগানরা তাদের দেশের নিরাপত্তার পুরো দায়িত্ব নেবে এবং আমাদের মিশন সম্পন্ন হবে। আর এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন লড়াইয়ের একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাপ্তি হবে।’

আফগানিস্তানে বর্তমানে ৩৩ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে সেখানে এক লাখ সেনা ছিল।

তবে ওবামা বলেন,আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণের জন্য সে দেশে প্রয় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করবে।

প্রেসিডেন্ট ওবামা বাগরামে সেনাদের উদ্দেশে আরো বলেন, আফগানিন্তান এ মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। মার্কিন বাহিনীর সহায়তায় তারা আল-কায়দা গোষ্ঠিকে ধ্বংস করেছে এবং তালেবানদের পরাজিত করেছে। মার্কিন বাহিনী এমন এক সময়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করছে যখন দেশটির স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং তারা নিজেদের জন্য একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেছে।

আর এসবই সম্ভব হয়েছে মার্কিন সেনাদের আত্মত্যাগের কারণে। ওবামা নিজ দেশের সেনাদের প্রসংশা করে বলেন,‘তোমাদের সাহায্যে আফগানরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আফগানিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসীরা আর কখনো আমার দেশে হামলা চালাতে পাবে না।’

এদিকে এই সফরে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে দেখা করছেন না প্রেসিডেন্ট ওবামা। আফগান কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলা বলার জন্য বাগরাম বিমানঘাঁটিতে কারজাইকে ডেকেছিলেন ওবামা। কিন্তু কারজাই তার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তিনি কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছাড়া অন্য কোথাও তার সঙ্গে দেখা করবেন না। ফলে কারজাইয়ের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরতে হচ্ছে ওবামাকে। তবে বাগরাম ছেড়ে আসার আগে ওবামা তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সম্মত না হওয়ায় ইদানিং কারজাইয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।

ওবামা তার এই সফরে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনীর প্রধান জেনারেল ডান ফোর্ড ও আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস কানিংহামের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

আফগানিস্তানে তালেবান হামলায় আহত মার্কিন সেনাদের চিকিৎসা নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে ওবামা প্রশাসন। এ কারণেই নাকি তড়িঘড়ি আফগানিস্তান সফরে গেছেন ওবামা।

আফগানিস্তানে গত ১৩ বছরের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে ২১শ মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো হাজার হাজার।



মন্তব্য চালু নেই