তিন লাশের সঙ্গে ৮০ ঘণ্টা আটকা
ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলেন তিনি। মারা পড়লেন না বটে, তবে বের হয়ে আসার কোনো জো রইল না। ওভাবেই আটকে রইলেন পাক্কা ৮০ ঘণ্টা। সঙ্গে আবার তিন লাশ। ভূমিকম্পদুর্গত নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে এমন এক যুবককে উদ্ধার করা হয় গতকাল মঙ্গলবার। ২৮ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম ঋষি খান্নাল।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া আরেকটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ৫০ ঘণ্টা ধরে আটকে ছিলেন এক নেপালি নারী। তাঁকেও গতকাল জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নেপালি-ফ্রেঞ্চ উদ্ধারকারী দল পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে ঋষি খান্নালকে উদ্ধার করে। সাততলা ওই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন ঋষি। তাঁর চিৎকার শোনার পরে উদ্ধারকর্মীরা গর্ত করে ধ্বংসস্তূপ থেকে তাঁকে বের করে আনে। সেখান থেকে আরও তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ঋষির একটি পা ভেঙে গেছে।
ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) গতকাল নেপালের মহারাজগঞ্জের পাঁচতলা ভবন বসুন্ধরার ধ্বংসস্তূপ থেকে সুনীতা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। এনডিটিভির খবরে এ কথা জানানো হয়।
উদ্ধার করার পর সুনীতাকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর স্বামী ও দুই সন্তানকেও অক্ষত অবস্থায় একান্তিপুর থেকে আজ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারটিকে এখন স্থানীয় একটি স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
উদ্ধারের পর সুনীতা বলেন, মনে হচ্ছে আমি এক অন্য জগতে এলাম। এনডিআরএফের সহকারী কমান্ড্যান্ট কুলিশ আনন্দ বলেন, আমরা জানতে পারি পাথরের দুটি খণ্ডের মধ্যে ওই নারী আটকে ছিলেন। ওই খণ্ডের মাঝে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল বলে তিনি রক্ষা পেয়েছেন।
কুলিশ আনন্দ বলেন, প্রথমে উদ্ধারকর্মীরা ওই জায়গাটি ফুটো করে। সেই ফুটো দিয়ে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর পর ওই নারীকে বের করে আনা হয়।
বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, নেপালে আজ বুধবার পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। গতকাল দেশটিতে এক তুষারধসের ঘটনায় আড়াই শ জনের মতো নিখোঁজ হয়েছেন। আজও তাঁদের খোঁজ মেলেনি। ভূমিকম্পদুর্গতদের জন্য তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে।
নেপালে গত শনিবার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে চলছে। এতে হতাশা ব্যক্ত করে নিজেরা যা পাচ্ছেন, তা নিয়েই ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহত স্বজনদের বের করে আনার চেষ্টা করছেন স্থানীয় লোকজন।
ইতিমধ্যে নেপালে দেখা দিয়েছে খাবার, পানি ও বিদ্যুতের সংকট। এতে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ বলছে, দেশটির ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি। জাতিসংঘ আরও বলছে, অন্তত ১৪ লাখ মানুষের জরুরি ভিত্তিতে খাবার ও পানি প্রয়োজন। ভূমিকম্পে অন্তত ৩৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১১টি জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ।
মন্তব্য চালু নেই