এশিয়ার ক্ষমতাবান মধ্যবিত্ত

সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা স্বত্ত্বেও এশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেনি বেশ দ্রুতই বাড়ছে। আগামী দশকে বাকী বিশ্বের উন্নয়নের তুলনায় এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উন্নয়নে এই শ্রেনিই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। ওইসিডি’র দেয়া তথ্যানুসারে বৈশ্বিক মধ্যবিত্ত শ্রেনি(যাদের উপার্জন দৈনিক দশ থেকে ১০০ ডলারের কম) আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় পাঁচ বিলিয়নে পৌঁছাবে। ২০০৯ সালেও বিশ্বে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ছিল মাত্র এক দশমিক আট বিলিয়ন। হিসেব অনুযায়ী বর্ধিষ্ণু মধ্যবিত্তের তিনভাগের দুই ভাগই এশিয়ার। আর এশিয়ায় এই বর্ধিষ্ণু মধ্যবিত্তের সংখ্যা হবে সবেচেয়ে বেশি।

প্রকৃতপক্ষে, চীন যদি তার ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চাঙ্গা রাখতে কাঠামোগত এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অব্যাহত রাখে তাহলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ শুধু চীনে মধ্যবিত্তের সংখ্যাই হবে এক বিলিয়ন। যেখানে ২০০৯ সালেও চীনে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৭ মিলিয়ন। এশিয়ায় মধ্যবিত্তের এই উত্থান অর্থনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। দেশে এবং বর্হিবিশ্বে খুব দ্রুত পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে। যে কারণে দেশিয় এবং বর্হিদেশিয় কোম্পানীগুলো আগ্রহী হবে। অটোমোবাইল ও মোবাইল ফোনের জন্য চীন বিশ্বের সর্ববৃহত বাজার ধরতে পারার কারণে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের ভোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি উঠেছে। কিন্তু বিলাস পণ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ব্যাপারেও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের মধ্যবিত্তরা। তার মানে এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত উন্নত দেশগুলোর ন্যায় পণ্য ক্রয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে।

এই অগ্রগামী যাত্রা একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকে আসলে উত্তরণ কাল সময়ের ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। এবং এশিয়ার সত্যিকার মুনাফা কত হচ্ছে তাও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে এশিয়া তার উৎপাদন এবং বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রেখেই চলছে।

এধরণের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতকে উন্নত করতে হয়, কারণ দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একমাত্র উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সম্ভব। চীনে গত সময়ের তুলনায় বর্তমানে সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা এখন পুষ্টি পায় এবং শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হচ্ছে। তাসত্ত্বেও বেশ ধীরেই এই অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।

এশিয়ায় উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেনি উচ্চতর কাজের জন্য প্রস্তুত হবে। দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মানে অনেক বেশি প্রতিশ্রুতিশীল হবে। কর্মোস্পৃহা আর গতি আইনের সঙ্গে মিলিত হয়ে শক্তিশালী হবে। এবং সমাজে নারীদের জন্য কাজের আরও ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। বৃহদার্থে সমাজ থেকে লিঙ্গ বৈষম্য দূর হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত শ্রেনির উত্থানের ফলে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং নাগরিক স্বাধীনতা জরুরী হয়ে পরবে। চারিদিকে গণতন্ত্রায়ণ জরুরী হয়ে দাড়াবে। প্রকৃতপক্ষে, উনবিংশ থেকে একবিংশ শতাব্দীতে আসতে অনেকগুলো দেশকে একটা বিশাল পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। জনসংখ্যা, শিক্ষিত সমষ্টি, বিশেষত রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহন গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষত কম উন্নত দেশগুলোতে।

পশ্চিমের দেশগুলোতে পুঁজিবাদ এবং গণতন্ত্র হাতে হাত ধরে বাজার অর্থনীতির উন্নয়নের দিকে এগিয়েছে। ভূস্বামীর ক্ষমতা কমিয়ে শ্রমিক এবং মধ্যবিত্তের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরসারি রাজনীতিতে অংশগ্রহনের মাধ্যমে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদানের মাধ্যমে এবং স্বৈরশাসনের বিপরীতে একটি আধুনিক ব্যবস্থা দাড় করিয়ে মধ্যবিত্তকে সমাজের অগ্রসর অংশ করা হয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি সংস্থাগুলো মধ্যবিত্তের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির মনোপলি থেকে বের হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই