উষ্ণ রক্তের মাছ ওপে

সাধারণত বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন মাছ শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। এরা নিজের দেহের তাপমাত্রা নিজেরা অভ্যন্তরীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পরিবেশের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এদের দেহের তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। কিন্তু এতো দিনের সেই ধারণায় পরিবর্তন আনলেন আমেরিকার মৎস্য জীববিজ্ঞানী নিকোলাস ওয়েগনার। বিজ্ঞানভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি ও তার দল এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছেন যে, পৃথিবীতে উষ্ণ রক্ত বিশিষ্টও মাছ আছে। আর এই উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট মাছের নাম হলো ‘ওপে’। হাওয়াই দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে এই মাছ পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবেও রয়েছে এই মাছের বেশ কদর। এই মাছটি তিনটি ভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এছাড়াও এই মাছ অনেকের কাছে কিংফিশ অথবা মুনফিশ নামেও পরিচিত।

ওপে মাছ সাধারণত লম্বায় দুই মিটার এবং ওজনে ২৭০ কেজির মতো হয়। এরা সমুদ্রের ছোট মাছ খেয়ে বেঁচে থাকলেও নিজেরা কিন্তু আবার বড় মাছ যেমন সার্ক, তিমি ও হাঙ্গরের শিকার হয়ে থাকে। এই মাছটি সমুদ্রের প্রায় ১৩০০ ফুট নীচেও নিজেদের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম। পৃথিবীতে যেখানে পানির তাপমাত্রা চার ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম সেখানেও তারা স্বাভাবিকভাবে বিচরণ করতে পারে। কারণ ওপে হচ্ছে প্রথম মাছ যার ফুলকার চারপাশে রেটি মিরাবিল থাকে। সাধারণত মাছের কিছু বড় রক্তনালী থাকে যা ফুলকা থেকে রক্তসংবহন করে থাকে। ফুলকার ক্ষুদ্রনালী পানি থেকে অক্সিজেন নিতে সহায়তা করে। কিন্তু ওপে’র ক্ষেত্রে বিস্তৃত ক্ষুদ্রনালীর জাল দেখা যায় যেখানে ধমণী ও শিরা শক্তভাবে বিন্যাস্ত থাকে। আর এই বিন্যাসকে রেটি মিরাবিল বলে। ফুলকার তাপ বিনিময়ের এই মিরাবিল এক সে.মি. পুরু চর্বির আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে, যা তাপ নিরোধক হিসেবে কাজ করে।

তবে অন্য প্রজাতির মাছ যেমন টুনা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাপ বৃদ্ধি করে শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গ উষ্ণ রাখতে পারে। ওপে মাছ সাধারণত অনেক মাংসাশী হয়ে থাকে। সামুদ্রিক মাছ হিসেবে হাওয়াই দ্বীপের রেষ্টুরেন্টগুলোতে এই মাছের তৈরি খাবার বেশ সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়।



মন্তব্য চালু নেই