হিমালয়ের কোলে গাঁজা চাষ
পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ব্যবসার মধ্যে অন্যতম মাদক এবং অস্ত্র। যত ঝুঁকি তত বেশি মুনাফা হওয়ার কারণে অনেকেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও এই ব্যবসায় নাম লেখান। ১৯৬০ সালের দিকে ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে হেরোইন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরে। এর থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। স্বাধীনতা পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকার অনেক স্থানেই হেরোইন তার কালো থাবা বসায়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে হেরোইন মাদকের প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি, যতটা পেরেছে গাঁজা। এখনও বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বহুল প্রচলিত মাদক হলো গাঁজা। যদিও গাঁজা আদৌ কোনো মাদক কিনা তা নিয়েও অনেক বিতর্ক প্রচিলিত আছে।
প্রাচ্যের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিমালয়। কত অজনা রহস্যের কেন্দ্র এই হিমালয় আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মানুষকে চ্যালেঞ্জ করে। সেই হিমালয়ের পাদদেশ থেকে প্রায় দশ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থানরত একটি গ্রামে অবৈধভাবে উৎপাদিত হয় প্রচুর গাঁজা। আর গাঁজার যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজার বেশ চড়া তাই প্রশাসনের পক্ষেও অতটা জোরালো ভাবে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।
কয়েক হাজার একর জমিতে এই গাঁজা চাষ করে স্থানীয় কৃষকেরা। তবে অন্যান্য স্থানের গাঁজাচাষীদের মতো হিমালয়ের এই চাষীরা শুধু গাঁজা উৎপাদন করেই ক্ষান্ত দেন না। তারা অধিক মুনাফার জন্য গাঁজা থেকে তৈরি করেন চরস। আন্তর্জাতিক বাজারে চরস খুব ভালো হাসিস হিসেবে বিক্রি হয়। গত তিন বছর ধরে ইতালির আলোকচিত্রী আন্দ্রে দি ফ্রান্সিস এই গ্রামের উপর কাজ করছেন। যদিও প্রথম দিকে তাকে এই গ্রামে ঢুকতেই অনেক বেগ পেতে হয়েছে, তবে ক্রমশ চাষীদের কাছে তিনি বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠার পরেই গাঁজার ক্ষেত্রের ছবি তুলতে পেরেছেন ফ্রান্সিস।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে গাঁজা অনেক প্রাচীন সময় থেকেই চলে আসছে। এযাবৎ ভারতীয় সংস্কৃতির যত পুরাতন নথি পাওয়া যায় তাতেও গাঁজার কথা পাওয়া যায়। দুই হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের পাওয়া পান্ডুলিপি থেকেও আমরা গাঁজার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারি। দীর্ঘদিন ভারতীয় সংস্কৃতিতে গাঁজা বৈধ হয়ে আসলেও ১৯৮৫ সালের দিকে গাঁজার উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে যায়। এরপর থেকে অনেকেই গোপনে গাঁজার উৎপাদন এবং ব্যবসা করেন। ধারণা করা হয়, ভারতে গাঁজার উপর নিশেধাজ্ঞা আরোপ করার পরেই মূলত হিমালয়ের গ্রামগুলোতে গোপনে গাঁজার চাষ শুরু হয়। পাঠকদের জন্য হিমালয়েও ওই গ্রামের কিছু আলোকচিত্র তুলে ধরা হলো।
মন্তব্য চালু নেই