মাছি নিয়ে পিঁপড়ের লড়াই

প্রকৃতির নিচুস্তর এক অপার রহস্যের জায়গা। বাস্তুসংস্থানের প্রায় প্রতিটি স্তরেই খাদ্যশৃঙ্ক্ষল নিয়ে প্রায়শই ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়। ভক্ষক সব সময়ই যেমন শিকারের খোঁজে থাকে তেমনি শিকারও তার তুলনায় দুর্বলকে শিকারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। প্রকৃতির এই নিয়ম ভঙ্গ হলেই অনাসৃষ্টির শুরু হয়ে যায়। ফুলের বাগানে ফুল ফোটে না, বসন্ত চলে গেলেও বৃক্ষের পাতা সবুজ হয় না।

আলোকচিত্রী শ্রীকুমার মহাদেব পিল্লাই সম্প্রতি বাস্তুসংস্থানের নিচুস্তরের এমন কিছু ছবি তুলেছেন যা আমাদের নিজেদের প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে। নিচের বাড়ির পেছনের বাগানেই যে এরকম দৃশ্য তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল তা কে জানতো। ক্যামেরা নিয়ে বাড়ির পেছনে একটু ঘুরতেই পিল্লাই দেখতে পান একদল পিঁপড়া সারি বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছে কোনো এক গন্তব্যের দিকে। পিঁপড়াদের পিছু নিতে গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পান তিনি। একটি জ্যান্ত মাছিকে দুটি পিঁপড়া ক্রমাগত আক্রমন করছে কাহিল করার জন্য।
FRONT-2যদিও পিল্লাই প্রথমে মনে করেছিলেন মাছিটিকে পিঁপড়ারা সম্মিলিতভাবে আহারের জন্য টানাহেচড়া করছে। কিন্তু ভুল ভাঙ্গে একটু গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে। গোটা পিঁপড়া সমাজ তাদের রানীর নেতৃত্বে যেন ঝাপিয়ে পরেছে মাছিটির দিকে। লক্ষ্য তাদের একটাই, কে তার ধারালো দাত ব্যবহার করে মাছির শরীর থেকে একটু বেশি মাংস তুলে নিতে পারে।

ছবির এক জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় একটু ভিন্ন চিত্র। মাছির মাথা ধরে একাই একটি পিঁপড়া টেনে চলেছে, অপরদিকে দুই পিঁপড়া মিলে মাছিটির পা টানাটানি করছে। পিল্লাইয়ের কাছে এই দৃশ্যটি সেই ‘মারো জওয়ান হেইয়ো’র মতো মনে হতেই পারে। প্রকৃতিতে আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে বর্ষাকাল। তাই বর্ষার পানি বাসস্থান ভাসিয়ে দেয়ার আগেই পিঁপড়াদের সম্ভ্যাব্য সকল খাবার মজুদ করতে হবে, তা না হলে আগামী বর্ষায় সন্তান-পরিজন নিয়ে উপোস দিতে হবে নির্ঘ্যাৎ।
PIPRAপিঁপড়াদের এই সংঘর্ষের বর্ননা দিতে গিয়ে ৩৯ বছর বয়সী নিওসার্জন পিল্লাই জানান, ‘আমার বাড়ির পেছনে অনেক গাছ আছে। আর সেখানেই মূলত ওই লাল পিঁপড়াদের বসবাস। অন্যান্য পতঙ্গের তুলনায় পিঁপড়ারা খুব আগ্রাসী এবং শিকারকে আক্রমন করতে বেশ দক্ষ তারা। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পিঁপড়াগুলো যেন বুঝতে পেরেছিল আমি ছবি তুলছি। তাই অনেকটা সময়ই যেন তারা আমাকে দিয়েছে একটা ভালো ছবি তোলার জন্য। এই ছবিগুলো নিয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি একটা ভালো শট পেয়েছি। দ্রুত নগরায়নের ফলে আমাদের সন্তানেরা পতঙ্গদের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহন করতে পারছে না। কারণ পিঁপড়া এবং মাকড়শার মতো প্রাণীদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের সন্তানদের প্রকৃতি সম্পর্কে শেখানো এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।’
PIRTA



মন্তব্য চালু নেই