১০ দিনের রিমান্ডে ফারাবী
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে ১০ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজাউল করিমের আদালতে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অভিজিৎ হত্যায় ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। এ সময় ফারাবীর পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। কেউ তার জামিন আবেদনও করেননি।
গত বৃহস্পতিবার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক হন ফারাবী। ফেসবুকে অভিজিৎ রায়কে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
সোমবার সকালে আটকের পর বিকেল পৌনে ৬টার দিকে ফারাবীকে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেয় র্যাব। তার আগে উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ফারাবী শফিউর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
তবে অভিজিৎ হত্যায় ফারাবী সরাসরি জড়িত কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম শাখা) মুফতি মাহমুদ বলেছিলেন, ‘আটকের পর ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে জানিয়েছে, এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিজিতকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল সে। হত্যাকাণ্ডে সে সরাসরি জড়িত কিনা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অভিজিৎ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে অভিজিতের সঙ্গে ফারাবীর পরিচয়। প্রথম দিকে অভিজিতের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। ভিন্ন মতাদর্শের কারণে পরবর্তীতে অভিজিতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় তার। তবে অভিজিতের ব্লগের লেখাগুলো তিনি নিয়মিত পড়তেন। অভিজিৎ খুন হওয়ার পর পর ফারাবী তার ফেসবুক ও ব্লগে বিভিন্ন কমেন্ট ও ছবি শেয়ারও করেছে। এসব থেকে ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ডে সে জড়িত থাকতে পারে। এজন্য সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী র্যাবকে আরো জানিয়েছেন, মান্নান রাহি নামে আরেক ব্লগারকে তিনি বলেছিলেন অভিজিতকে এখন হত্যা করা সম্ভব হবে না। সে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলে তাকে হত্যা করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘তিন-চার বছর ধরে ফারাবী ব্লগার হিসেবে ইসলামী চিন্তা-চেতনা নিয়ে লেখালেখি করে জনপ্রিয়তা পান। নিজের মতাদর্শের বিপরীতে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের বিভিন্ন ব্লগে বিরোধিতা করতে থাকেন তিনি। এ নিয়ে তার সঙ্গে রাজীব হায়দার (থাবা বাবা), আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিৎ রায়, তসলিমা নাসরিন, দাড়ি-পাল্লা ধমাধম, দিগম্বর-পয়গম্বর, সানতুনু মহাপাত্র, অগ্নিবীনা, মশিউর রহমান (আল্লামা শয়তান), সানতুনু আদিম, প্যানগ্যান দেবতা ও হিন্দু যোদ্ধা নামক ব্লগারদের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়।’
কে এই ফারাবী
শফিউর রহমান ফারাবীর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানার বড়ভিলা কুমারশীল মোড় কালাইশ্রী পাড়া। তার বাবার নাম ফেরদৌসুর রহমান। ২০০৫ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এক সময় লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ২০১০ সালে হিযবুত তাহরীরে যোগ দেন। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজিব খুন হওয়ার পর ফেসবুক ও ব্লগে বিভিন্ন উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেন তিনি। অভিজিৎ রায়ের মতো একই কায়দার হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারানো আরেক ব্লগার রাজীব হায়দারের (থাবা বাবা) জানাজা পড়ানো ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়ে আটক হন ফারাবী শফিউর রহমান। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
অভিজিতকে হত্যা ও মামলা
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক অভিজিৎকে। ওই হামলায় আহত হন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পরদিন নিহত অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় শাহাবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি কারো নাম উল্লেখ না করলেও সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদীরাই অভিজিতকে হত্যা করেছে।’
মন্তব্য চালু নেই