একসঙ্গে ছয় বান্ধবীর আত্মহত্যা
একসঙ্গে ওড়নায় হাত বেঁধে বিষে চুমুক দিয়েছিল ছয় বান্ধবী। বাঁধন খুলে বিষযন্ত্রণায় ছটফট অবস্থায় ছুটে এসে জানায়, ওরা ছয় বান্ধবী একসঙ্গে বিষ খেয়েছে।
গ্রামে লোকজন ছুটে গিয়ে দেখেন তেঁতুলতলায় পড়ে আছে পাঁচ কিশোরীর মৃতদেহ। ততক্ষণে ওদের কেউই আর বেঁচে নেই। এই তেঁতুলতলায় বসেই একসঙ্গে বিষপান করেছিল ছয় বান্ধবী। এ ঘটনা ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ওড়ো গ্রামের নায়েকপাড়ায়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
কী হতে পারে মৃত্যুর কারণ? খোঁজ শুরু হয়। শেষে যা জানা যায়, তা এ রকম- ওদের প্রত্যেকের প্রেমিক ছিল। গ্রামের মেলায় একসঙ্গে ঘুরতেও দেখা গিয়েছিল তাদের। তা নিয়ে গ্রামের লোকের বাঁকা কথা আর বাড়ির লোকের বকাবকির জেরেই ছয় কিশোরী একসঙ্গে কীটনাশক পান করে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ এ কথা জানায়।
সোমবার সন্ধ্যায় একসঙ্গে ওই ছয়জন কীটনাশক খায়। রাতেই মারা যায় নমিতা নায়েক (১৭), পালং নায়েক (১৬), সরস্বতী নায়েক (১৫), বুড়ু নায়েক (১৪) ও বেবি নায়েক (১৩)। একমাত্র প্রাণে বেঁচে যায় পূজা নায়েক (১৭)। তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিশ জেনেছে এসব।
পুলিশের দাবি, পূজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, তাদের সকলেরই প্রেমিক ছিল। শিবরাত্রির মেলায় তারা দেখাও করেছিল। গ্রামের কিছু লোক তা দেখে বাড়িতে খবর দেয়। তার পর থেকে অশান্তির শুরু। অভিভাবকেরা তাদের বকাবকি করেন। জানিয়ে দেন, এই সব সম্পর্কে তাদের সম্মতি নেই।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শয্যায় পূজা জানায়, ‘ছেলেগুলো আমাদের নিয়ে পালাতে চেয়েছিল। রাজি হইনি।’ পুলিশের দাবি, তাদের কারও প্রেমই পরিণতি পাবে না মনে করে ছয়জন নিজেদের শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে পূজা জানিয়েছে।
পুলিশের ধারণা, আগে থেকেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল ছয় বান্ধবী। কয়েক দিন আগে শিবরাত্রির মেলা ভাঙার পরে প্লাস্টিকের বাটি সংগ্রহ করে তারা। সোমবার সন্ধ্যায় সেই বাটিতেই কীটনাশক ঢেলে সকলে মিলে একসঙ্গে চুমুক দেয়। সঙ্গে ছিল মুখরোচক নোনতা। আত্মহত্যার আগে ওড়নার ফাঁস দিয়ে পরস্পরের হাতও বেঁধে নিয়েছিল ছয় বান্ধবী। পূজা অবশ্য বিষের বাটি শেষ না করেই পালিয়ে আসে। তাই সে মরতে মরতেও বেঁচে যায়।
পাঁচ কন্যাকে হারিয়ে এখন থমথম করছে ওড়ো গ্রাম। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামে আসে পাঁচ কন্যার দেহ। ওড়ো লাগোয়া কুপন নদীর ধারে এক সঙ্গেই জ্বলে ওঠে পাঁচটি চিতা।
মন্তব্য চালু নেই