৭০ সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে কূটনৈতিক জোন
কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজধানীর গুলশান, বারিধারা ও বনানীকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের নাশকতায় জড়িতদের শনাক্ত করতে গোটা এলাকায় ৭০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশের তত্ত্বাবধানে গুলশান-২ নম্বর এলাকায় আটটি ক্যামেরা চালু করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও তাদের বাসভবন আক্রান্ত হওয়ায় এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নুরুল আলম জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা চিন্তা করে গুলশান এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ, বেশিরভাগ কূটনীতিক ও বিদেশী নাগরিক গুলশান-বারিধারা এলাকায় বাস করেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
কমিশনার বলেন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কাজে গুলশান, বারিধারা, নিকেতন ও বনানী আবাসিক সোসাইটি আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে পুলিশকে সহায়তা করছে। সিসি ক্যামেরা ছাড়াও গুলশান জোনের আওতাভুক্ত এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। অতিরিক্ত আর্মড পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে।
কমিশনার জানান, খালেদা জিয়ার বাসভবন ও কার্যালয় ঘিরেও পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। সেখানে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে গুলশান জোনকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বনানী থেকে গুলশানে প্রবেশের মুখে বসানো হচ্ছে দুটি ক্যামেরা। এই ক্যামেরার ভিডিওচিত্র বনানী থানায় বসে পর্যবেক্ষণ করা হবে। গুলশান এক নম্বর গোলচত্বর, ৮৬ নম্বর সড়ক ও নামীদামি হোটেলের আশপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। এসব এলাকার ক্যামেরাগুলোও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ মনিটরিং করবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বারিধারা ডিওএইচএস, বনানী, হাতিরঝিল থেকে গুলশানমুখী রাস্তা, বাড্ডা, নতুন বাজার, নদ্দা-কালাচাঁদপুরসহ গুলশানে প্রবেশের সব পয়েন্টেই বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা।
পুলিশের ধারণা, গুলশান এলাকার নাশকতাকারীরা এই এলাকার অনুপ্রবেশকারী। তারা বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তাই তাদের শনাক্ত করতে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগে বিশ্ব ইজতেমাসহ বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পুরো থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। রাজধানীর অন্য এলাকার চেয়ে এই এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা সব সময়ই থাকে। তবে এটি স্থায়ী হওয়া জরুরি। এ কারণে পুরো গুলশানের প্রবেশমুখে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। প্রথম দিকে ৭০টি ক্যামেরা বসানো হবে।
জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে গুলশান এলাকায় ২০ দলের নেতাকর্মীরা নাশকতা চালাতে পারে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা চলতি মাসের শুরুতে সরকারকে সতর্ক করে। এরই অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারির আগে গুলশান এলাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এর মধ্যেই কিছু চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটে, যা সরকারকে বিব্রত করে। তাই গুলশান এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গুলশান এলাকায় ইতিমধ্যে স্থাপন করা আটটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র গুলশানের উপপুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই