পূর্বাচল সিটি : ৫৭ ভাগ কাজ হতে লেগেছে দীর্ঘ ২২ বছর

দুই দশক আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ গড়ার প্রকল্প হাতে নেয়। একে একে ২২ বছর কেটে গেলেও এখনও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। ২০০৫ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত ২২ বছরে প্রকল্পটির মাত্র ৫৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। শুরুতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। গত দুই দশকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।খবর পরিবর্তনের।

বাড়তি ব্যয়ের পুরোটাই বহন করতে হচ্ছে প্লট গ্রহীতাদের। তবে প্রকল্পের মূল কাজ শেষ হওয়ার সর্বশেষ সময় আবার পুনঃনির্ধারণ করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ।

রাজউকের চেয়ারম্যান জানান, আগামী ২০১৮ সালের জুন মাসে পূর্বাচল নতুন শহরের মূল কাজ শেষ হবে। এরপর শুরু হবে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগসহ অন্যান্য কাজ। এই কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরো ৫ বছর।

তবে এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে খোদ রাজউকের কর্মকর্তারা।

গত বছর কয়েক মাস প্রকল্পের গাজীপুর অংশে কাজ বন্ধ ছিল। এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে এ অংশে ঢুকতে পারেনি রাজউকের লোকজন। কারণ, এলাকাবাসী চায় না সেখানে রাজউকের প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক। পরে মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করে আবার কাজ শুরু হয়েছে। যে কারণে এখানে সড়ক সংযোগসহ অনেক কাজ এখনও বাকি রয়েছে।

২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

রাজউক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় মোট ৬ হাজার ২৭৭ একর জমিতে পূর্বাচল নতুন শহর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া খিলক্ষেত এলাকার ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ‘কুড়িল-পূর্বাচল’ ৩০০ ফুট সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট জমির ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আবাসন খাতে। ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বাণিজ্যিক প্লট, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য ১ দশমিক ৯ শতাংশ, শিল্প-প্রতিষ্ঠানের জন্য ২ শতাংশ এবং গবেষণা ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য ২ দশমিক ৩ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে সড়ক যোগাযোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, বাণিজ্য ও সামাজিক অবকাঠামোর জন্য ৯ দশমিক ১ শতাংশ, লেক ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, বন, বাস্তু উদ্যান ও সবুজ নগরায়ণের জন্য ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং খেলাধুলার জন্য ২ দশমিক ৮ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে মোট প্লটের সংখ্য ২৫ হাজার ১৬টি। এরই মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার প্লট গ্রাহককে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে মোট ব্রিজ হবে ৬২টি। এরই মধ্যে প্রায় ৪০টি ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। ৩২০ কিলোমিটার রোডের মধ্যে প্রায় ২০০ কিলোমিটার রোডের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু লেকের কাজ বাকি আছে। ৪৫ কিলোমিটার লেকের মধ্যে প্রায় ৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল বাধা কী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ কারা হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক উজ্জল মল্লিকের সাথে। তিনি বলেন, ‘মামলা মোকদ্দমা ছিল এ প্রকল্পের মূল বাধা।

এলাকাবাসীর অনেক দাবি দাওয়া এখনও মীমাংসা হয়নি। এখনও সব ঝামেলা শেষ করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার সেটা এখনও ঠিক হয়নি। চারটি পুলিশ লাইন হবে। এগুলো এখনও কার্যকর হয়নি। নিরাপত্তা না থাকলে মানুষ এখানে কীভাবে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এখনও এখানে কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার- এগুলো মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা। এটা যতক্ষণ পূরণ হবে না, যতই আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করি কোন লাভ হবে না।

তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রকল্পের ১৯ নম্বর সেক্টরে ১৪২ তলা একটি আইকনিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। সেই ব্যপারে কাজ চলছে। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এই ১৪২ তলা ভবনটি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চ ভবন।’

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৫৭ ভাগ শেষ হয়েছে।

রাজউকের চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০১৮ সালে জুন পর্যন্ত। তবে আরো কিছু সময় লাগবে। ১৯৯৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও আমাদের জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হয়েছে। জমি বুঝে পেতে আমাদের দেরি হয়েছে। তারপর মামলা সংক্রান্ত অনেক জটিলতা ছিল। মূলত গাজীপুরের অংশটি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এলাকার লোকজন এখনও বিপক্ষে রয়ে গেছে।’

তবে খুব তাড়াতাড়ি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।



মন্তব্য চালু নেই