কাফরুল থানায় সাধারণের ঢুকতে মানা!

বৃহস্পতিবার তখন প্রায় সন্ধ্যা। আব্দুল আওয়াল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা কাফরুল থানায় যান। মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে যাওয়ায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তিনি।

একই সময়ে থানায় গেছেন সুজন নামে আরও এক ব্যক্তি। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।

কিন্তু কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দিলেন না থানার প্রধান ফটকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য আব্দুল্লাহ ও নজরুল ইসলাম।

তাদের বক্তব্য, একটাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও অনুমতি ছাড়া থানায় প্রবেশ নিষেধ! ফলে তাদের ফিরে যেতে হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, থানায় এসে সাধারণ নাগরিকরা যদি সেবাই না পেলেন তবে সেই থানা কার স্বার্থে? কাদের সেবা দিচ্ছে কাফরুল থানা?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থানাটির আওতাভুক্ত এলাকায় ৫ লাখ মানুষের বসবাস। পুলিশ স্টাফ কলেজ, মিরপুর পুলিশ লাইন ও বিআরটিএ কার্যালয়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও দিনকে দিন অপরাধ কর্মকাণ্ড ও আবাসন বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এলাকাটি। এ এলাকাতে নেই কোনো স্থায়ী চেকপোস্ট।

বৃহস্পতিবার একই সময় একটি হত্যা মামলা ও ডিবি পুলিশের একটি টিমের ‘অভিযান নাটক’ সম্পর্কে জানতে কাফরুল থানার প্রধান ফটকের সামনে আসেন এ প্রতিবেদক। সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে থানার ওসির সাক্ষাতের কথা জানালে নজরুল ইসলাম নামে ওই আনসার সদস্য বলেন, ‘আপনার পরিচয়পত্র দেখান। কোথা থেকে আসছেন, কার কাছে যাবেন।’

আনসার সদস্য বলেন, ‘আপনি ওসির সাক্ষাত চাইলে তার অনুমতি লাগবে। দরকার আপনার, আপনিই ওসিকে ফোন করেন। ওসির অনুমতি ছাড়া ভেতরে প্রবেশ নিষেধ।’

এরপর ওসি সিকদার মো. শামীম হোসেন ও মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব না হওয়ায় থানায় প্রবেশের অনুমতিও মেলেনি।

একই পরিস্থিতির শিকার আব্দুল আওয়াল ও সুজন বলেন, ভাই আমরাও চেষ্টা করছি। কিন্তু এ দুই আনসার সদস্য কোনোভাবে ঢুকতে দিচ্ছে না। গেট বন্ধ করে রেখেছে।

সুজন বলেন, ‘আমার ওসির সাক্ষাৎ জরুরি। ওনার সাথে আমার ফোনে কথাও হয়েছে। কিন্তু এখন আর তিনি ফোন ধরছেন না। আমিও আর থানায় যেতে পারলাম না।’

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নির্দেশনা ডিএমপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। বরং ভুক্তভোগীরা, স্থানীয়রা ও সাধারণ মানুষ সেবা নিতে থানায় যাবেন এটাই স্বাভাবিক।’

বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও আশ্বাস দেন।

ওসি শিকদার মো. শামীম কাফরুল থানার দায়িত্বে আসেন ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট। ঢাকা মহানগর পুলিশের শ্রেষ্ঠ ওসির স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি কয়েকবার।

প্রশ্ন উঠেছে সেই ‘শ্রেষ্ঠ’ ওসির থানায় কেন এমন নিষেধাজ্ঞা?

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থানায় জঙ্গি থ্রেট রয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কেউ থানায় এলে অবশ্যেই সেবা নেবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি করে ভেতরে যেতে দিতে বাধা নেই। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কিংবা বাধা দেয়ার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যদি এমনটি ঘটে থাকে তবে তা আমার অগোচরে ও অজ্ঞাতে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

মিরপুর বিভাগের এডিসি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার কোনো নির্দেশনা মিরপুর বিভাগ দেয়নি। সাধারণরা থানায় ঢুকতে পারবে না এমনটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এ নিয়ে অবশ্যই ওসি শামীমের সঙ্গে কথা বলবো।’

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিলও একই ধরনের ঘটনা ঘটে মিরপুর বিভাগেরই মিরপুর মডেল থানায়। বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিবেদক নাঈম আল জিকো সংবাদ সংশ্লিষ্ট কাজে থানার ওসির সাক্ষাতের জন্য গেলেও তাকেও একইভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর বিষয়টির সুরাহা হয়। জাগো নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই