রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ‘গণহত্যা’ নয় : কফি আনান

মিয়ামনারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে নিচ্ছেন না কফি আনান।

জাতিসংঘের প্রাক্তন এ মহাসচিব আরাকান রাজ্য ঘুরে এসে বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, সেখানে উত্তেজনা আছে, যুদ্ধ চলছে। আমি এটাকে সেভাবে দেখতে চাই না, যেমনটি কেউ কেউ দেখছেন।’

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। রোববার এক বক্তব্যে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সে সময় রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা পরিদর্শনে আরাকান রাজ্য পরিদর্শনে ছিলেন কফি আনান।

কফি আনান ও নাজিব রাজাকের বক্তব্যের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। তবে মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষায় উচ্চকণ্ঠ ভূমিকা নিয়েছে।

অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তারক্ষীদের চৌকিতে হামলা চালিয়ে নয়জনকে হত্যা করে অজ্ঞাত অস্ত্রধারীরা। এরপর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটির সেনা-পুলিশ।

রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, অভিযানের নামে নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে তারা। অধিকার হরণ, খুন, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অভিযোগ কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ার জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করেছেন রাষ্ট্রীয় পরামর্শক শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি।

প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক সু চি আগস্ট মাসে কফি আনানকে সফরের আমন্ত্রণ জানান। আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনরা বসবাস করে।

কফি আনান বিবিসিকে বলেছেন, সেখানে উভয় সম্প্রদায়ই আতঙ্কিত। সেখানে ভয় ও অবিশ্বাস আছে। আতঙ্ক আরো বাড়ছে কিন্তু তা প্রশমনের জন্য উপায় খুঁজতে পারি আমরা এবং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে উৎসাহিত করতে পারি।

মানবাধিকার গ্রুপগুলো দাবি করছে, দুই মাসে প্রায় ২১ হাজার ৯০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সমালোচনা করেছে।

দুই দেশের সীমানা নির্ধারণী নাফ নদী পার হয়ে রোহিঙ্গারা নৌকায় করে দলে দলে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে কয়েকবার নৌকাডুবিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। রোববার মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের (বিজিপি) গুলিতে তিনটি নৌকা ডুবে কমপক্ষে ১৫ জন মারা যায়। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। এ ঘটনায় দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত অবস্থায় এক রোহিঙ্গা শিশু নাফ নদীর মিয়ানমার তীরে কাদায় উপুড় হয়ে ছিল। তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরও কফি আনান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে গণহত্যা বলতে রাজি নন।



মন্তব্য চালু নেই