পরকিয়ার টানে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে!
এখনও ডিভোর্সি নয় ‘লন্ডনি বধূ’ রুমেনা বেগম। কাগজপত্রে তিনি লন্ডনে থাকা বিশ্বনাথের আজাদ মিয়ার স্ত্রী। আর লন্ডন থেকে দেশে আসার পরই রুমেনা হয়েছেন অপহৃত। এখন তিনি বিশ্বনাথেরই দুর্যাকাপন গ্রামের আরেক যুবক রশিদের সঙ্গে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন। এই বসবাসের ‘বৈধতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রুমেনার নিজের পরিবারও। আজাদের সঙ্গে ডিভোর্স না হওয়ায় নতুন করে হয়নি কাবিনও। তবে, ইতিমধ্যে একটি কাবিননামায় সই দিয়ে রেখেছেন রশিদ ও রুমেনা। ডিভোর্স কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কাবিন করা যাবে না।
তবে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে, আজাদের জন্য রুমেনাকে আর প্রয়োজন নাও হতে পারে। এর কারণ আজাদ ইতিমধ্যে বৃটেনের নাগরিত্ব পেয়েছেন। কিন্তু তার দুটি সন্তান রেদোয়ান ও রায়হানের জন্য মা প্রয়োজন। মায়ের জন্য পথ চেয়ে আছে দুটি অবুঝ সন্তান। গতকাল লন্ডনে থাকা আজাদ মিয়া জানিয়েছেন, দুটি সন্তানের মধ্যে সাড়ে ৩ বছর বয়সী রায়হান মায়ের জন্য অস্থির। কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কিন্তু মাকে পাচ্ছে না।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, রশিদের সঙ্গে রুমেনার পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। ওই সময় লন্ডনেই ছিল রুমেনা। ফেসবুকে সম্পর্কের পর রশিদ নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দিয়ে রুমেনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে। পূর্বের স্ত্রীর সঙ্গে থাকা একটি ছবিও পাঠায়। ওই ছবিগুলো পরবর্তীতে রুমেনার আইডি থেকে সংগ্রহ করেছেন স্বজনরা। এ কারণে রুমেনা দেশে আসবে বিষয়টি জানতো রশিদ।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ৬ই জুন অপহৃত হন লন্ডনি বধূ রুমেনা বেগম। রুমেনার দেশে আসার খবরটি জানেন বলেই রশিদ ওই দিন ওসমানী বিমানবন্দরে গিয়ে হাজির হন। আর সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সিনেমার কাহিনীর মতো রুমেনাকে নিয়ে তিনি বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করেন। মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার বোন রুমেনা যখন বিমানবন্দরের বাইরে আসে তখন সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকেছিল। কিন্তু তাকে চিনে ফেলে রশিদ। গাড়ির পাশ দিয়ে আসার সময় জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে পালিয়ে যায়। এরপর রশিদ রুমেনাকে নিয়ে মৌলভীবাজারের একটি কাজী অফিসে যায়। সেখানে তারা কাবিন করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পূর্বের ডিভোর্সের কপি না থাকায় তাদের কাবিন হয়নি। কাবিনে তারা দুজন সই করেছেন।
লন্ডনে থাকা আজাদ মিয়া জানিয়েছেন, রশিদ রুমেনার কাছে আরেক মেয়ের সঙ্গে তার ছবি পাঠিয়েছিল। সেটিও পরবর্তীতে ফেসবুক থেকে পাওয়া গেছে। তিনি জানান, রশিদ বখাটে এক যুবক। বাড়ি সিলেটে দুর্যাকাপন (মামলার এজাহারে বর্ণিত চানশির কাপন) গ্রামে। সে ল্যাংড়া বলে সবাই তাকে ল্যাংড়া রশিদ নামেই চেনে। সে রুমেনাকে অপহরণ করে তার বাড়িতেই রেখেছে বলে দাবি করেন আজাদ মিয়া।
কারণ, রুমেনা ও রশিদের একত্রিত বেশ কয়েকটি ছবি রুমেনার আইডিতে তার কাছে পাঠানো হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ছবিতে রুমেনাকে বিমর্ষ দেখায় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, রশিদ আগেও নিজেকে কোটিপতি পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু এখন তার আসল পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পর ওই স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। সে জোরপূর্বক অন্যের সংসার ভেঙে নতুন সংসার গড়ে কী শান্তি পায় প্রশ্ন করেন আজাদ।
ওদিকে আজাদের সঙ্গে বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে লন্ডনেই কিছুটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে রুমেনা। রুমেনা লন্ডনের পাসপোর্টধারী হলেও ওখানে তারা ছিল অনেকটা অভিভাবকহীন। শুধু বৃটেনের পাসপোর্ট ছিল। কিন্তু থাকা খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এক সময় দেশের বাড়ি দৌলতপুরে মামাত ভাইয়েরা তাদের ভরণপোষণ করতো। পিতার সূত্রে লন্ডনি হয়ে প্রবাসে গেলেও রুমেনা তার বড় বোনের পথেই এগোয়। বড় বোনও বিয়ে করেছিল দেশের আরেক মামাত ভাইকে। কিন্তু লন্ডন যাওয়ার পর বড় বোনও দেশে থাকা স্বামীকে ভুলে অন্যের প্রেমের গা ভাসায়।
এখনও ওই মামাত ভাইয়ের সঙ্গে ডিভোর্স হয়নি বড় বোনের। সেই পথেই হেঁটেছে রুমেনা। এজন্য লন্ডনে কয়েক বছর ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল রুমেনা বেগম। স্বামীর আজাদের নিষেধ অমান্য করে সে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে। তার এসব কর্মকাণ্ডে খোদ আত্মীয়রা হয়ে পড়েছিলেন বিব্রত। আর রুমেনার ভাইয়েরাও একই পথ অনুসরণ করেছেন। বড় ভাই লন্ডনেই প্রেম করে বিয়ে করেছেন আরো এক নারীকে। ওই নারীকে নিয়ে তিনি আজাদ মিয়ার সংসারেই ছিলেন। এ নিয়ে ঘটেছে নানা কাহিনী।
এদিকে, ৭ই জুন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করার পরপরই পুলিশ প্রযুক্তিনির্ভর অনুসন্ধান করে। ফেসবুক ও হোয়াটস আপ, ভাইবার ও মোবাইল ফোন সম্পর্কিত তদন্ত শুরু হয়। রুমেনার খোঁজে পুলিশ যখন অস্থির তখন রুমেনা ও রশিদ নিজেদের ফেসবুকে আপলোড করা সব ছবি মুছে ফেলে। এখন দুজনের ফেসবুক তল্লাশি করে তাদের কোনো ছবি পাওয়া যায় না। পরিবারের লোকজন জানান, একসময় ফেসবুকে তারা প্রতিদিনই আপলোড করতেন। কিন্তু এখন তাদের ফেসবুকে কোনো ছবি নেই। সর্বশেষ তারা কাজিরবাজার ব্রিজ থেকে কয়েকটি ছবি লন্ডনে থাকা আজাদ মিয়ার কাছে আপলোড করেছিলেন। -মানবজমিন।
মন্তব্য চালু নেই