১০০ বছর পর প্রকাশিত হলো বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের ৪৯ হাজার ব্যাগ প্রেমের চিঠি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ১০০ বছর পর সৈনিক ও তাদের প্রেয়সীর ৪৯ হাজার ব্যাগ প্রেমের চিঠি প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের ‘ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়াম’। চিঠিগুলো এ বছর ভালোবাসা দিবসের আগে প্রকাশ করা হয়।

এ বছর ভালোবাসা দিবসের আগে ৪৯ হাজার ব্যাগ চিঠি, ৮০ হাজার রেজিস্টার্ড বস্তু ও ১ লাখ পার্সেল উন্মুক্ত করা হয়েছে।চিঠিগুলোতে যুদ্ধের সময় মানব-মানবীর বিচ্ছেদ বিরহের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে।এ চিঠিগুলো ইতিহাস জানার পথ খুলে দিয়েছে।

ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়াম ডিজিটাল মেমোরিয়াল প্রকল্পের আওতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ও তার প্রিয়তমাদের লেখা ৪৯ হাজার চিঠির সঙ্গে ৮০ হাজার রেজিস্টার্ড করে পাঠানো বস্তু ও ১ লাখ পার্সেল জনগণের জন্য উন্মুক্ত করেছে।

প্রকাশিত চিঠিগুলোতে সৈনিক মনের ভালোবাসার গল্প ওঠেছে। যুদ্ধ সৈনিকের সঙ্গীকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। দূরত্ব তৈরি করে। তৈরি করে অশ্চিয়তা। তারা জানে না আর কোনোদিন মিলিত হতে পারবে কিনা। চিঠিগুলোতে তাদের অনিশ্চিত জীবনের বিরহ-বেদনা ও বিচ্ছেদের কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে।

চিঠিগুলোর মধ্যে হৃদয় স্পর্শী চিঠি রয়েছে। তার মধ্যে আলেকজান্ডার সিম্পসন তার স্ত্রী মাজ্জিই অ্যানকে একগুচ্ছ চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে তিনি একটি পোস্টকার্ড ব্যবহার করেছেন। পোস্টকার্ডে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণ যুগল চুম্বন করছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, এ মেয়ে চুম্বনে রাজি আছে। ছেলেটাকে আমার হিংসা হচ্ছে।

আরেকটি চিঠিতে আলেকজান্ডার অ্যানকে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, আমি আজ ট্রেন ধরতে পারিনি। আগামী দিন বাড়িতে আসবো। যদি বাড়ি আসতে না পারি তাহলে হতাশ হবে না। কিন্তু এ চিঠি লেখার দুই সপ্তাহ পর মাত্র ৩৮ বছর বয়সে জাটল্যান্ড যুদ্ধে আলেকজান্ডার নিহত হন ‘

5(3)

আলেকজান্ডারের নাতি মালকল্ম রবার্টসন তার মায়ের কাছ থেকে দাদার লেখা চিঠিগুলো সংগ্রহ করেছেন।

রবার্টসন বলেন, ‘চিঠিগুলো চমৎকার। আমি দাদাকে দেখিনি। চিঠির মাধ্যমেই তার সঙ্গে একটু পরিচিত হয়েছি। দাদার চিঠিই দাদার অবয়ব আমার মধ্যে গড়তে সাহায্য করছে। চিঠিগুলো খুবই মূল্যবান। এ চিঠির মাধ্যমেই দাদা ১০০ বছর ধরে আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।’

যুবতী এক নারীর লেখা একটি চিঠি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হেট্টি নামের ওই নারী চিঠিতে চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে শীতের কথা, বড়দিনের উদযাপন ও মনের মানুষ উইলিয়াম ক্রাউফোর্ডের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

চিঠিতে সে কবিতার চারটি চরণ লিখেছেন, ‘এখানে একটি উড়ন্ত ঘুঘুর প্রতি ভালোবাসা/ এটার সম্ভবত একটি পালকও খসে যায়নি/ আমি ছোট ছেলে ভালোবাসতে পারি না/ যদি না পারি চিরতরে চলে যাবো।’

ক্রাউফোর্ড চিঠির উত্তরে হেট্টিকে লিখেছেন, ‘কদাচিৎ প্রত্যাশা করেছি, কোনো সুন্দরী নারী একজন সৈনিকের অপেক্ষা করে থাকবে। আমি তোমাকে বলতে চাই, তোমাকে খুবই ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের ক্যাম্প অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। আসতে পারলে খুবই মজা হতো। আমি তোমার হতাশা বুঝি।’

500x350_f9f723e0555668a9878b2a3a9ab950e4_4bk2386ca0b93244ya_620C350(2)

সৈনিক রবসনের প্রেমিকা তার চিঠি বুকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কোনো দিন বিয়ে করেননি।

ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়ামের প্রধান বলেন, ‘প্রত্যেকটি চিঠির আলাদা আলাদা গল্প বলছে। চিঠিগুলোতে যুদ্ধের প্রকৃত অবস্থা ওঠে এসেছে। এ চিঠিগুলো ইতিহাস জানার সর্বোত্তম পথ খুলে দিয়েছে।

সরকারের একজন নারী মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গল্পগুলো বর্তমান প্রজন্মকে প্রভাবিত করবে। আমরা আশা করছি, আগামী বছরগুলোতে যুদ্ধের আরো গল্প জানতে পারবো।’

আলেকজান্ডার মাজ্জিইকে এই পোস্টকার্ডটি পাঠিয়ে ছিলো।



মন্তব্য চালু নেই