বীরশ্রেষ্ঠর নামে তৈরি পার্কের হালচাল

পার্ক নয় যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়

পার্ক নয় যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া সাধারণ মানুষজন পার্কের ভেতরে ঢুকে সেরে নিচ্ছেন প্রাকৃতিক কর্ম। গুলিস্তানে এরকম অযত্ন অবহেলায়ই পড়ে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান পার্ক।

সরিজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন ভাঙা ভবনের ইট-সুরকিও রাখা হয়েছে এই বীরশ্রেষ্ঠর নামে করা পার্কের ভেতরে। দেখে মনে হবে, যেনো মাদক সেবীদের অভয়ারণ্য। দিনেদুপুরে পার্কের ভেতরে বসে গঞ্জিকা সেবন করছেন এক শ্রেণির মানুষ।

পার্কের ভেতরে দলবেঁধে নেশাগ্রস্থ ও ছিনতাইকারীদের আনাগোনা লক্ষণীয়। এছাড়া এটি যেন ভবঘুরে, ভিক্ষুক ও মানসিক রোগীদের এক আশ্রয় কেন্দ্র!

সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের চারপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া থাকলেও পশ্চিম এবং দক্ষিণ পাশ দখল করে নিয়েছে দোকানিরা। তারা ‍অবৈধভাবে বসছেন বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে। এছাড়া পার্কের ভেতরে রয়েছে খাবারের দোকান ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যালয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন সাড়ে তিন একর জায়গা জুড়ে পার্কটির এমন অবহেলা ও অযত্নের কারণে ভেতরে সাধারণত দর্শনার্থীদের তেমন দেখা যায় না।

কোথায়ও কোনো নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা যায়নি। নতুন কোনো দর্শনার্থী এই পার্কে বেড়াতে এলে পার্কের নাম জানার কোনো উপায় নেই। কারণ প্রধান গেট বা পার্কের কোনো অংশে লেখা নেই এটি ‘শহীদ মতিউর পার্ক’।

পার্কের ভেতরে ঘোরাফেরা করছিলেন শাহীন, মনোয়ার ও হানিফ নামে তিন বন্ধু। তাদের কাছে পার্কটি সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, এই পার্কের নাম তাদের জানা নেই, বাইরে থেকে দেখে ভেতরে এসে বসেছেন। প্রকৃত পক্ষে পার্কের যেমন চেহারা থাকার কথা, এই পার্কের চিত্র উল্টো বলে তারা অভিযোগ করেন।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলিস্তানে অবস্থিত পার্কের দক্ষিণপাশের সীমানাপ্রাচীরের গ্রিল ভেঙে যাতায়াতের রাস্তা করা হয়েছে।

শতশত গাছগাছালিতে ভরা শহীদ মতিউর পার্ক এর ভেতরে বড় একটি পুকুরও রয়েছে। কিন্তু পাশের কাজী বশির মিলনায়তনের (মহানগর নাট্যমঞ্চ) স্যুয়ারেজের লাইন পুকুরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ করে পুকুরটিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীদের বসার আসনগুলো আগেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে পার্কের কোনো উপকরণ নেই। সীমানা প্রাচীরের পাশে প্রস্রাব করে পরিবেশকে দারুণভাবে নষ্ট করা হয়েছে। পার্কের পূর্বপাশে গণশৌচাগার থাকলেও এটি ব্যবহারে মানুষ মোটেও আগ্রহী নয়।

শৌচাগারের দায়িত্বে থাকা গোলাম কিবরিয়া বলেন, পার্কে তো দর্শনার্থী আসে না, তাই শৌচাগার ব্যবহার করতে প্রতিদিন ১৫/১৮ জনের মতো মানুষ আসে। যারা পার্কের ভেতরে নিয়মিত ঘোরাফেরা করে তাদের মধ্যে মাদকসেবী, টোকাই, ভবঘুরে, ভিক্ষুক ও মানসিক রোগীর সংখ্যাই বেশি। তারা তো আর শৌচাগার ব্যবহার করতে আসে না।

পার্ক এলাকায় ‘বাদল ভাই’ নামে পরিচিত এক হকার পার্কের ভেতর ও বাইরে ফুটপাত জুড়ে খাবারের দোকান নিয়ে বসেছেন।

অবৈধভাবে দোকান বসানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথাও তো আর জায়গা নেই, দোকান না করলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। কর্তৃপক্ষ বার বার দোকান ভেঙে দিচ্ছে। আবার নতুন করে নির্মাণ করি। এ যেন এক খেলা! আমরা চাই, আমাদের যেন একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দেন মাননীয় মেয়র।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ বলেন, পার্কের আশপাশে ও ভেতরের অবৈধ স্থাপনা একাধিকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারপরও আবার গড়ে। আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফুটপাত, পার্ক ও অন্যান্য এলাকায় যেসব অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা রয়েছে তা উচ্ছেদ করা হবে।

রাজধানীর সব পার্ক দখলমুক্ত করে পরিবেশ সুন্দর পরিবেশে ফিরে আনতে ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন থেকে কাজ চলছে, সাধারণ মানুষের স্বার্থে নগরীর খোলা জায়গা ও পার্কগুলোকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলানিউজ



মন্তব্য চালু নেই