হংকংয়ে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ
এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য বাণিজ্যিক নগরীর মধ্যে হংকং অন্যতম। ব্রিটিশ শাসন থেকে বের হওয়ার পর থেকে স্বাধীন চীনের অংশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শহরটি। উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গণে ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান দখল করে নিতে হংকংকে পার করতে হয়েছে অনেকটা সময়। চীনের সঙ্গে কোনো প্রকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও চীনের নির্ধারিত প্রশাসকরাই দীর্ঘদিন ধরে হংকং শাসন করে আসছে। সম্প্রতি এই শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীন স্থানীয় নির্বাচনের দাবিতে হংকংয়ের সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর এক পর্যায়ে স্বাধীন নির্বাচনের দাবি স্তিমিত হয়ে গেলেও হংকংবাসীর জন্য এই আন্দোলন ছিল সূচনা মাত্র। যার প্রমাণ তারা নতুন করে গজিয়ে ওঠা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে দিয়েছে।
চীনের নিয়ম অনুযায়ী, হংকংয়ে যারা মেইনল্যান্ডার(চীনের নাগরিক) তারা কম শুল্কে নির্ধারিত স্থান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে পারে। যেহেতু হংকং একটি বাণিজ্যিক নগরী এবং বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে বছরের পর বছর বাস করে তাই সকলে চাইলেও কম শুল্কে পণ্যসামগ্রী কিনতে পারে না। তাই এই বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রাস্তায় নেমেছে শহরটির সাধারণ জনগণ। যে সকল স্থানে মেইনল্যান্ডারদের এই সুবিধা দেয়া হয় সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাধারণ জনগণ।
৩৮ বছর বয়সী লিয়ুঙ প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানান, ‘তারা মনে করে যে এটা চীনের সুপারমার্কেট। হংকং শুধুমাত্র এর বাসিন্দাদের জন্যই হওয়া উচিত। প্যারালেল ট্রেডাররা নির্ধারিত কম মূল্যে পণ্য কিনে সেই পণ্যই আবার বাড়িতে বাড়িতে চড়া দামে বিক্রি করে। শুধু তাই নয়, তারা এই পণ্য ক্রয় করে চীনেও নিয়ে যায় কারণ চীনে পণ্য প্রবেশের জন্য তাদের কোনো শুল্ক গুনতে হয় না।’
হংকং পর্যটন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৯৭ সালে প্রায় আড়াই মিলিয়ন মানুষ হংকংয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসেন। যাদের সবাই প্রায় জাতিতে চীনা। হংকংয়ের বেশিরভাগ বড় ব্যবসাই মূলত এই ব্যবসায়িরা নিয়ন্ত্রন করেন। প্রতিবাদকারীদের দাবি, তাদের সুবিধা দিতেই চীন সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু এরফলে গোটা হংকংয়ে দীর্ঘমেয়াদী বৈষম্য দেখা দিয়েছে।
গতবছর এক জরিপে জানা যায় হংকংয়ের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাত মিলিয়ন। অথচ প্রতিবছর প্রায় ৫৪ মিলিয়ন মানুষ শহরটিকে স্রেফ ঘুরতে আসে। এই ঘুরতে আসা মানুষদের মধ্যে অধিকাংশই চীনা। যাদের ‘মেইনল্যান্ডার’ বলে অভিহিত করা হয়। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে তারা শুধুমাত্র কেনাকাটা করার জন্যই হংকংয়ে আসেন। কারণ হংকংয়ে তাদের জন্য রয়েছে শুল্কমুক্ত পণ্য ক্রয়ের সুবিধা।
মন্তব্য চালু নেই