স্বামী বা স্ত্রী কেমন হবে তা জানতে গোয়েন্দা নিয়োগ!
ভবিষ্যত স্বামী বা স্ত্রী কেমন হবে তা জানার জন্য এখন অনেক ব্রিটিশ এশিয়ান পরিবার প্রাইভেট গোয়েন্দা নিয়োগ করছেন। প্রাইভেট গোয়েন্দারা জানান, তাদের মোট ব্যবসার অর্ধেকটা এই খাত থেকেই আসে।
এসব গোয়েন্দাদের কাজের মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যত স্বামী বা স্ত্রীর অতীত অনুসন্ধান, ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ আর প্রেমের সম্পর্ক আছে কিনা তা খুঁজে বের করা। এটা ভারতে শুরু হলেও এখন ব্রিটেনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব একেকটি এশিয়ান বিয়ের পেছনে অন্তত পঞ্চাশ হাজার ডলার খরচ হয়। এরকম একটি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন বিবিসি’র সংবাদদাতা শিতল পার্মার।
এক শীতের শনিবারে মিডল্যান্ডের একটি বারে কুড়ি বছর বয়সী একজন এশীয় যুবকের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে এসেছেন কয়েকজন ব্যক্তিগত গোয়েন্দা। কারণ এই যুবকের সঙ্গে ভারতীয় এক তরুণীর পারিবারিকভাবে বিয়ের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু হবু বর কেমন তা জানতে চায় মেয়েটির বড় বোন।
এ বিষয়ে বড় বোন সুকি বলেন, ‘সবচেয়ে যে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে চাই তা হলো ছেলেটির বিশ্বাসযোগ্যতা। সে কি সত্যিই বিয়ের বিষয়ে সিরিয়াস, নাকি বিষয়টিকে সে নিছক একটি আনন্দ হিসাবে নিচ্ছে, সেটা জানা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই না সে আমার বোনকে শুধুমাত্র এ কারণেই বিয়ে করুক যাতে সে অন্যদের দেখাতে পারে সে বিয়ে করেছে আর তার মায়ের জন্য একজন পূত্রবধু নিতে পারছে। যা অনেক ছেলেই করে থাকে।’
দুইদিনের এই অনুসন্ধানের জন্য সুকিকে কয়েকশ পাউন্ড গুনতে হয়েছে।
সাধারণত গোপনে, ছদ্মবেশে এরকম অনুসন্ধান করে থাকে প্রাইভেট গোয়েন্দারা। টার্গেট সম্পর্কে যতটা সম্পর্ক তথ্য নিয়ে তারা কাজ করতে শুরু করে। দুইদিনের এই অনুসন্ধানের জন্য চারজন গোয়েন্দার খরচ, গাড়িভাড়া, প্রমান সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে সুকিকে কয়েকশ পাউন্ড গুনতে হয়েছে।
ভবিষ্যত বর কেমন হবে, তার অতীত এবং বর্তমানের কর্মকান্ড জানার জন্য অনেক পরিবারই এই অর্থ খরচ করতে রাজি। এরকম একটি প্রাইভেট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা রাজ সিং বলেন, ‘এখানে আসলেই অনেক ভীতির ব্যাপার রয়েছে। সম্পর্ক করার সময় অনেকেই অনেক উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলে। কিন্তু ভালো ব্যাপার হলো, এখন অনেকেই সচেতন হয়ে উঠছে। তারা এসব বিষয় যাচাই করে দেখতে চায়। তারা জানতে চায়, সে মদ্যপান করে কিনা, সিগারেট খায় কিনা, কাদের সঙ্গে মেশে, কোথায় কোথায় যায়, কেমন চাকরি করে, অন্য কোন নেশা করে কিনা। বারে মেয়েদের সঙ্গে মেশে কিনা। এসবই তারা জানতে চায়।’
কিন্তু আপনি কি মনে করেন যে একজন সম্পর্কে গোপনে এসব তথ্য সংগ্রহ, নৈতিকভাবে ঠিক? কারণ এর ফলে অনেকের হয়তো বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে বা সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যা, আমি ঠিক মনে করি। যারা এরকম তদন্তের অনুরোধ নিয়ে আসে, তাদের কাছেও এর কারণ রয়েছে। ভবিষ্যত সম্পর্কের বিষয়ে তারা জানতে চাইতে পারে। আমরা শুধু তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করছি।’
রাজসিংয়ের এই কোম্পানির সত্তর শতাংশ গ্রাহক এশিয়ার। এদের মধ্যে ভারতীয় এবং পাকিস্তানিও রয়েছে। তবে এশিয়া থেকে আসা নয় এমন অনেক পরিবারও এখন এসব কোম্পানির দারস্থ হচ্ছে। এসব কোম্পানির কাজের সবচেয়ে বড় অংশটি বিবাহপূর্ব তদন্ত যা গত কয়েকবছরে দ্বিগুণ হয়ে দাড়িয়েছে।
অনেক অনলাইন ঘটকালির কোম্পানিও এসব কোম্পানির সাহায্য নিচ্ছে।
হবু বর বা হবু কনের সম্পর্কে সব ধরণের তথ্য সংগ্রহই তাদের কাজ। এখন এমনকি অনেক অনলাইন ঘটকালির কোম্পানিও এসব কোম্পানির সাহায্য নিচ্ছে। তাদের প্যাকেজের মধ্যেও থাকছে এসব তথ্য সরবরাহের বিষয়টি।
এরকম একটি ঘটকালি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সারাঞ্জিত খানদোলা বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক বেশি সন্দেহগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাও অনেক বেড়েছে। মানুষ এখন সামাজিক মাধ্যম, মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে সহজেই অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। তাই মানুষের মধ্যে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসও কমে যাচ্ছে। আমার গ্রাহকদের মধ্যে অন্তত ৯০ শতাংশ হবু বর বা কনের সম্পর্কে আগে খোঁজ-খবর নিতে চায়।’
তবে পারিবারিকভাবে যারা বিয়ে করতে চায়, তাদের অনেকেই এই ব্যবস্থার বিরোধী। লন্ডনের একজন তরুণ শিখ তানমানজিত সিং দেশি মনে করেন, এটা প্রথমেই বিশ্বাসের উপর একটি আঘাত।
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত গোয়েন্দাদের ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে, এর ফলে আসলে পারস্পরিক বিশ্বাসের ঘাটতি বেরিয়ে আসে। এটা উদ্বেগজনক, কারণ একটি সম্পর্ক তো তৈরি হয় পরস্পরের বিশ্বাস আর আস্থার ভিত্তিতে। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রথমেই তো সেখানে আঘাত পড়ছে।’
সুকির গোয়েন্দাদের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিয়েটি ভেঙ্গে যায়। বোনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রথমে কিছুটা খারাপ হলেও তা আবার ঠিক হয়ে গেছে। তারপরেও যুক্তরাজ্যে এরকম ব্যক্তিগত গোয়েন্দাদের কাজ বাড়ছে। কারণ প্রতিদিনই এরকম অনেক তদন্তের আবেদন জমা পড়ছে তাদের দফতরে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
মন্তব্য চালু নেই