সৌদিতে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত গৃহকর্মী : ১৯ বছর ধরে দেখাশুনা করছেন গৃহকর্তা

সৌদি নাগরিক সালাহ আল-সাইয়োফি। ১৯ বছর আগে তার বাসার গৃহকর্মী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ইথিওপিয়ার নাগরিক ওই গৃহকর্মী সাইয়োফির বাসায় কাজ শুরু করেছিলেন। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার শেষ ইচ্ছার কথা জানান।

সালাহ আল-সাইয়োফি বলেন, যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন আমার বাসায় আশ্রয় চান ওই গৃহপরিচারিকা। শুধু তাই নয়, সেখানেই পৃথিবী থেকে বিদায়ও নিতে চান তিনি।

সৌদি আরবের জাতীয় দৈনিক আল-মদিনা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর ১৯ বছর ধরে ইথিওপিয়ান এক গৃহকর্মীর সেবা-যত্ন নিয়ে আসছেন সৌদি আরবের এক দম্পতি!

সালাহ আল-সাইয়োফি বলেন, গৃহকর্মীর অনুরোধে তিনি ও তার স্ত্রী প্রায় ১৯ বছর ধরে দেখাশোনা করছেন। তিনি বলেন, মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত আমার বাসার ছাদের নিচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ওই গৃহকমী। এরপর থেকেই পরিবারের অন্য সদস্যরাসহ আমি ও আমার স্ত্রী তার দেখাশোনা করে আসছি।

শেষ ইচ্ছা পূরণের গল্প

‘আমার গৃহকর্মীর গল্প আজও আমাকে চমকে তোলে। আমার একজন বন্ধু ছিল; যে তার বাসার কাজের জন্য ইথিওপিয়ান একজন গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। বাসায় কাজ শুরুর কয়েক মাস পরেই তার শরীরে প্যারাপ্লেজিয়া ধরা পড়ে। পরে শরীরের আরো তিনটি অঙ্গ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়। ওই বন্ধুর তত্ত্বাবধানে কয়েক মাস তার চিকিৎসা চলে’।

নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে আল-সাইয়োফি গৃহকর্মীর চিকিৎসায় সহায়তা শুরু করেন। ওই গৃহকর্মী ভিসা নবায়নের অনুরোধ করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। পরে নিজের পরিবার ও তাকে দেখাশোনার আহ্বান জানান ইথিওপিয়ান ওই গৃহকর্মী। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন সাইয়োফি।

হাসপাতালে গৃহকর্মীকে দেখতে যান আল-সাইয়োফি। এ সময় ওই গৃহকর্মী তার চিকিৎসা ও দেখাশোনার দায়িত্ব সাইয়োফির কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ করেন।

সাইয়োফি বলেন, ‘আমার তত্ত্বাবধানে দেওয়ার জন্য ওই গৃহকর্মী অনুরোধ করেন এবং তার সেবা-শুশ্রুষার পুরো দায়িত্ব আমাকে নেওয়ার আহ্বান জানান। আমার স্ত্রী এবং আমি, সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর তাতে রাজি হয়ে যাই। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করি এবং তখন থেকই তার চিকিৎসা চালিয়ে আসছি। আমার স্ত্রী তাকে দেখাশোনা করেন এবং তার প্রয়োজনে সহায়তা করেন’।

সাইয়োফি বলেন, ‘তাকে (গৃহকর্মী) গোসল, খাবার খাওয়ানো, কাপড় পরতে আমার স্ত্রী এমনভাবে সহায়তা করেন যেন তার নিজের বোন’।

‘আমাদের বাড়িতে ওই গৃহকর্মী বসবাস করছেন এবং মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকাই তার শেষ ইচ্ছা। অনেকেই এটি বোঝা হিসেবে দেখেন, কিন্তু উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে আমরা তাকে যা দিয়েছি, তারচেয়ে বেশি সুখ তিনি আমাদের দিয়েছেন। আমরা ছোট্ট ভাড়া বাসায় থাকতাম কিন্তু বর্তমানে আমার একটি বাগানবাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আছে’ বলেন সালাহ আল-সাইয়োফি।



মন্তব্য চালু নেই