সাগরের বুকে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক রাস্তা! (ভিডিও)

সাগরের বুকে রাস্তা, হ্যাঁ দুপাশে সাগর, আর মাঝখানে দিয়ে চলে গেছে এক রাস্তা, তবে মানুষ্য সৃষ্টি কোন রাস্তা নয় সেটি, প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে তৈরী হয়েছে সেই রাস্তা।

রাস্তাটি ফ্রান্সের বোর্নিউফ উপসাগরে অবস্হিত। মুল ফরাসি ভূখণ্ডের ভেন্দি-র সাথে ন্যয়রমৌটিয়ার দ্বীপের সংযোগ ঘটিয়েছে। সাগরের বুক চিরে চলে গিয়েছে এক চিলতে রাস্তা ‘প্যাসেজ দ্যু গোয়ে’। এই রাস্তা ধরে শুধু মানুষই নয়, সাগর পেরিয়ে দ্বীপে পৌঁছয় গাড়ির সারি ও গৃহপালিত নানা পশু। তবে প্রতিদিন মাত্র দু’ বার এক থেকে দু’ ঘন্টা রাস্তাটি ব্যবহার করা চলে।

বাকি সময় ১.৩ থেকে ৪ মিটার জলের নীচে চলে যায় এই পথ। কোরিয়া সহ বিশ্বের আরও কিছু দেশে এমন রাস্তা আছে বটে, কিন্তু প্যাসেজ দ্যু গোয়ে-র দৈর্ঘ্য তার অভিনবত্বের অন্যতম কারণ। এই রাস্তাটি মোট ৪.৫ কিলোমি টার লম্বা। অষ্টদশ শতকে রাস্তার দৈর্ঘ্য আরও বেশি ছিল বলে জানা গিয়েছে।

প্যাসেজ দ্যু গোয়ে-র উত্পত্তি ঐতিহাসিক কালে। নৃতত্ববিদদের মতে, প্রাগৈতিহাসিক কালে এই অঞ্চলের একটি মালভূমি ভেঙে পড়ায় জন্ম নেয় উপসাগর। মালভূমির উত্তর ও দক্ষিণদিকের সমুদ্র একাকার হয়ে যাওয়ার পর দুই সাগরের ঢেউ দু’ দিক থেকে ধেয়ে এসে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধায়। ঢেউয়ের সঙ্গে বয়ে আসা পলি যুগের পর যুগ জমে ক্রমে সমুদ্রতল অগভীর হয়ে পড়ে। তাই ভাটার টানে সমুদ্র পিছিয়ে গেলেই জলের জেগে ওঠে এক চিলতে ডাঙা।

অতীতে ন্যয়রমৌটিয়ার দ্বীপে নৌকো নিয়ে পাড়ি দিতেন মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দারা। প্রায় ১০ বছর আগে সমুদ্রের মাঝে জমি মাথা তুলতে তার উপর পাকা রাস্তা তৈরির ভাবনা স্মৃষ্টি হয়। ইতিহাস বলছে, ১৮৪০ সালে পাথরে বাঁধানো এই রাস্তায় ঘোড়ায় টানা গাড়িতে দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত শুরু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে সমুদ্রের উপর তৈরি হয় সেতু।

585657

প্যাসেজ দ্যু গোয়ে-র টানে সারা বছর এখানে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। তবে রাস্তা পারাপার করা এখানে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। গোটা পথের ধারে জোয়ার-ভাটার সময়, জলের মাত্রার উচ্চতা ইত্যাদি বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য লেখা সাইনবোর্ডে রয়েছে। রয়েছে জল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি সুরক্ষা টাওয়ার। তা সত্বেও প্রতি বছরই এই রাস্তায় ঘটে একাধিক দুর্ঘটনা। আসলে জোয়ারের সময় এখানে এমন তীব্র গতিতে জল এসে পড়ে যে সতর্ক না থাকলে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

তবে নির্দেশাবলী মেনে চললে এখানে মজার খোরাকও কম নেই। রাস্তার জল সরে গেলে এখানে মেলে হরেক প্রজাতির শামুক আর ঝিনুক, যা কুড়োতে পর্যটকদের পাশাপাশি হাজির হন স্থানীয়রাও। মূল ভূখণ্ড থেকে ন্যয়রমৌটিয়ার দ্বীপ পর্যন্ত ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি বছর এক দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিখ্যাত সাইকেল রেস ‘ত্যুর দ্য ফ্রান্স’-এও সংযোজিত হয়েছে এই পথ।

এছাড়া গাড়িতে এই পথ পাড়ি দেওয়াও এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বাইবেল কথিত রাজা মোজেসের পদাঙ্ক অনুসরণের রোমাঞ্চে মজতে চান আট থেকে আশি, সকলেই।– ওয়েবসাইট

নীচের ভিডিওটি দেখুন পানি উঠে আসার পর ‘প্যাসেজ দ্যু গোয়ে’ কত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে



মন্তব্য চালু নেই