সহসা কাটছে না ট্রাম্প প্রশাসনের লেজেগোবরে অবস্থা

এক সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের দুটো ধাক্কা খেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। বহুল আলোচিত ট্রাম্পের অভিবাসন সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে বাতিল হয়ে গেছে।

এবার রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রুশ কূটনীতিকদের সঙ্গে ফোনালাপের জেরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ফ্লিনের পদত্যাগে হোয়াইট হাউসের আপাতত মাথা ব্যথা দূর হলেও প্রশাসনের লেজেগোবরে অবস্থা এখনই দূর হচ্ছে না এবং তা ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনএসসি) বা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তারাই বিদেশনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, এমনকি যুদ্ধ কিংবা শান্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে থাকেন।

আজ থেকে ৭০ বছর আগে শীতল যুদ্ধের প্রাক্কালে হোয়াইট হাউসের গোয়েন্দা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এনএসসি পরিচালনা করা একটা মারাত্মক চাকরি। হেনরি কিসিঞ্জারের মতো ব্যক্তি এ দায়িত্ব পালন করেছেন।

এখন পর্যন্ত ২৫ জন ব্যক্তি এ পদে কাজ করেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিয়োগ দেয়া সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিনের মতো কেউ ছিলেন না। গত বছরের শেষের দিক থেকে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের নজরদারিতে ছিলেন ফ্লিন এবং অনেকেই তাকে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি বিপজ্জনক মনে করছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে মস্কোর রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে মাইকেল ফ্লিন আলোচনা করেছিলেন কিনা এবং এ ব্যাপারে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে মিথ্যা বলেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে সোমবার পদত্যাগ করেন ফ্লিন।

নতুন প্রশাসনের চার সপ্তাহ পূর্তি না হতেই নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক জেনারেলের এ পদত্যাগ ট্রাম্পের জন্য এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এছাড়া হোয়াইট হাউসের জন্য এটা বড় ধরনের একটা ধাক্কা, যেখানে ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ পরিবেশে একটা বিশৃংখল ও লেজেগোবরে অবস্থা বিরাজ করছে।

মাইকেল ফ্লিনের পদত্যাগ বিশ্বজুড়ে একটা শকওয়েভ তৈরি করেছে এবং একই সঙ্গে হঠাৎ জাতীয় নিরাপত্তা সংকট মোকাবেলায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই ট্রাম্প বলে আসছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা প্রশ্নে তিনি একটি কার্যকর ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রশাসন গড়ে তুলবেন।

কিন্তু ফ্লিনের পদত্যাগ কার্যকর নিরাপত্তা দল তৈরির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিচার-বিবেচনাকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ফ্লিনের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোকে অনেক বিশ্লেষকই বড় কোনো বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে দেখছেন না। শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বাধিক বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন ফ্লিন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তার মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদাই মূলধারার বাইরে বলে মনে করা হতো।

তার এ পৃথক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বহু জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকই ভেবেছিলেন যুদ্ধ বা শান্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরামর্শের জন্য ট্রাম্পের শেষ ভরসায় পরিণত হতে যাচ্ছেন ফ্লিন।
ফ্লিনের এ পদত্যাগ তার ব্যাপারে আরও তদন্তের রাস্তা খুলে দিতে পারে। রাশিয়ার প্রতি তিনি এত সহনুভূতিশীল কেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে তার কী ধরনের যোগাযোগ রয়েছে- এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

শুরু থেকে হাতেগোনা কয়েকটি ইস্যুর মধ্যে রাশিয়া এমন একটি টপিকে পরিণত হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ক্যাপিটল হিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা মারাত্মক ফাটল সৃষ্টি করেছে।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের মাখামাখি এবং রুশ আগ্রাসনের ব্যাপারে তার অন্ধ হয়ে থাকা সিনেটর ম্যাককেইনের মতো রিপাবলিকান নেতার জন্য মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতা থেকে ফ্লিনের পতন এবং কেলেংকারির কারণে তার এ পতন শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকানদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ফাটল তৈরি করবে কিনা।

একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর ট্রাম্প কিভাবে কতটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন সে প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। নয়ত শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প নিজেই কংগ্রেশনাল তদন্তের মুখোমুখি হয়ে নিজের অবস্থান হারাতে পারেন।



মন্তব্য চালু নেই