সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফুটপাথ

ফুটপাথ তো সবসময় উন্মুক্তই থাকে। সেটা আবার কবে বন্ধ করা হলো, এই প্রশ্ন পাঠকের মনে আসতেই পারে। তবে যে ফুটপাথের কথা বলছি সেটা আর ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাথ এক নয়। এ হলো বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ফুটপাথ, যে রাস্তায় প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুঝুঁকি। একটু পা ফসকালেই সোজা আছড়ে পরতে হবে হাজার ফুট নিচের কঠিন পাথরের গায়ে। মৃত্যুঝুঁকিতে বিখ্যাত এই ফুটপাথটি স্পেনের মালাজা প্রদেশের এল কোরো আলোরা পাহাড়ের শরীরে অবস্থিত।

পথচারীদের জন্য আগামী বছরের শুরুর দিকেই উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এই রাস্তাটি। দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তাটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। শুধু বিশেষায়িত কিছু প্রকৌশলীই এই পথটি ব্যবহার করতে পারতেন। পাহাড়ের নামে রাস্তাটির নামকরণ হলেও, বর্তমানে রাস্তাটির নামেই পাহাড়টিকে মানুষ চেনে। পাহাড়টির নাম বাংলায় করলে দাড়ায় ‘রাজার হাটার জায়গা’। সাহিত্যের ছলে হোক আর শব্দের মারপ্যাচেই হোক রাস্তাটি যে আসলেই রাজার হাটার জায়গা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এই রাস্তায় হাটতে গেলে যেমন চাই দুর্দান্ত সাহস, তেমনি চাই মানসিক শক্তি। যাদের হৃদযন্ত্র অল্পতেই কহিল হয়ে যায় তাদের জন্য এই রাস্তা নয়।

সম্প্রতি প্রকৌশলীরা রাস্তাটির একাংশের সংস্কার কাজ শেষ করেছেন এবং এ সম্পর্কিত একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে এই রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ার পর এবারই প্রথম বিশ্ববাসী রাস্তাটিতে নতুন করে দেখার সুযোগ পেয়েছে। আগের ফুটপাথে রাস্তার পাশে ধরার মতো কোনো কিছু ছিল না। কিন্তু প্রকৌশলীরা বর্তমান রাস্তায় চিকন লোহার দড়ির ব্যবস্থা করেছেন, যা ধরে যেকেউ সহজেই পাড়ি দিতে পারবেন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর এই ফুটপাথ।

২০১১ সালে স্পেনের আঞ্চলিক সরকার এবং মালাজা প্রদেশের সরকার মিলে এক যৌথ অর্থায়ণের মাধ্যমে এই ফুটপাথটিকে সংস্কার করতে রাজি হয়। পুরো রাস্তাটির সংস্কার কাজে ব্যয় হয় প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের মার্চ মাস নাগাদ সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করতে প্রকৌশলীদের যে সময় বেধে দেয়া হয়েছিল সেই সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় সরকার।

তবে যারা এতক্ষনে মনে মনে ভাবছেন যে পথটি খুলে দিলেই পর্যটকদের বন্যা বয়ে যাবে এবং স্থানীয় সরকারের দু-পয়সা আয় হবে, সে আশায় গুড়েবালি। কারণ আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এই পথটি মাত্র তিন মাসের জন্য পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। কারণ জুন-জুলাই থেকে শুরু হওয়া খারাপ আবহাওয়ার কারণে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যা এড়িয়ে যেতে চাইছে স্থানীয় সরকার। অন্যদিকে রাস্তাটিতে চলাচল করতে হলে মেনে চলতে হবে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন। একসঙ্গে নির্দিষ্ট কয়েক জন মানুষ ছাড়া অনেকে একসঙ্গে রাস্তাটিতে চলতে পারবেন না। এতে যেকোনো মুহূর্তে রাস্তাটি ধসে পরতে পারে। তবে যাই হোক, বিশ্ববাসীর জন্য আরও একটি দর্শনীয় স্থানের দুয়ার উন্মুক্ত হচ্ছে, এটাই আপাতত স্বস্তির সংবাদ।



মন্তব্য চালু নেই