শান্তিনিকেতনে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও ব্লাকমেলের ঘটনায় তোলপাড়

ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরের শান্তিনিকেতনে ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী বিশ্বভারতীতে পড়তে আসেন। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বভারতীরই শিক্ষার্থী।

শান্তিনিকেতনের সেই শান্তি বুঝি আর নেই। বিশেষ করে শান্তিনিকেতনে পড়তে আসা মেয়েদের জন্য জায়গাটি আর মোটেই নিরাপদ নয়। ভিন রাজ্য থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা এক ছাত্রীর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা তো তাই বলছে।

ছাত্রীটি রবীন্দ্র আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে সিকিম থেকে ছুটে এসেছিলেন বিশ্বভারতীতে। ভর্তি হয়েছিলেন কলাভবনে। দিনের পর দিন তিন সহপাঠী তাকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। আবার সেই ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করেছে। মেয়েটির অভিযোগ, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তো শোনেইনি, উল্টো পুলিশকেও অভিযোগ জানাতে দেয়নি। বরং শুক্রবার নজরবন্দি করে বাবা ও মেয়েকে তুলে দেওয়া হয় ট্রেনে।

বিশ্বভারতীর কলাভবনের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী তার সিনিয়র তিন সহপাঠীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রধান এবং অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তার দাবি ছিল, ওই তিনজন তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। মোবাইলে সেই ছবি তুলে রেখেছে। ব্ল্যাকমেল করে টাকাও আদায় করেছে। এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার দুদিন পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি। উল্টে অভিযুক্ত তিন ছাত্রকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে বলা হয়।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সিকিম থেকে ছুটে আসেন ছাত্রীর বাবা। দেখা করেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু তার অভিযোগ, পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার কথা না জানাতে চাপ দিতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কলাভবনে শিক্ষক ও আধিকারিকদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলার পর নিগৃহীত ছাত্রীর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপাচার্য এবং কলাভবনের অধ্যক্ষ বলেছেন, মিডিয়া-পুলিশের কাছে গিয়ে কী হবে? আপনাদের যদি জামাকাপড়-তোয়ালে লাগে, তা হলে আমরা দেব। আমি সত্যি সত্যি ভীষণ হতাশ, বিশ্বাস করুন।’

বিষয়টি শান্তিনিকেতনে জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়ায়। সব জেনেও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কেন চুপ, কেন অভিযুক্ত তিনজনকে চিহ্নিত করে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, এমন নানা প্রশ্নে দিনভর তোলপাড় হয়েছে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস।

তৃণমূল সাংসদ তথা বিশ্বভারতীর সমাজকর্ম বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অনুপম হাজরা বলেন, ‘চূড়ান্ত নির্লজ্জতার পরিচয় দিল বিশ্বভারতী। যেখানে উচিত ছিল অভিযুক্ত ছাত্রদের শাস্তির ব্যবস্থা করা, সেখানে কার্যত ভয় দেখিয়ে, টাকার লোভ দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দিল।’

কলাভবনেরই প্রাক্তন ছাত্রী প্রখ্যাত ভাস্কর সোমনাথ হোড়ের মেয়ে শিল্পী চন্দনা হোড় বলেন, ‘শান্তিনিকেতন বরাবরই চেপে রাখে। বাইরে দেখায় কিছু হয়নি, সব ভালো। আদতে সেটা নয়!’



মন্তব্য চালু নেই