শরীর থাকলে খারাপ হবে, ভিড়ে ঘটবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা

শুক্রবার বিধানসভায় ছিল পুলিশ বাজেট নিয়ে আলোচনা। খাগড়াগড়, পিংলা, সাত্তোরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তথা তৃণমূলের শাসনে রাজ্যের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। তারই জবাবি ভাষণে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে স্বাস্থ্যের উপমা টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী (ঘটনাচক্রে, যাঁর হাতে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও)।

কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?

বলেছেন, ‘‘শরীর থাকলে একটু পেট খারাপ হবে, জ্বর হতে পারে, বমি হতে পারে। এত লোক যেখানে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে দু’একটি ঘটনা ঘটছে। সেগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু আমরা চাই, একটাও (ঘটনা) যেন না ঘটে।’’ পুরভোটে তাঁর দলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ যেমন সপাটে উড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই জোর দিয়ে বলেছেন, পিংলায় একটি বাজি কারখানাই ছিল (যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, বোমা তৈরি হচ্ছিল ওই কারখানায়)।

সার্বিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা যা বলছেন, কেউ জেনে বলছেন না। তাঁদের বক্তব্য ভাসা ভাসা, জোলো জোলো, গোলো গোলো।’’

এ দিন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বিধানসভায় আসেননি। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া সভায় থাকলেও বিতর্কে অংশ নেননি। ফলে বিরোধী শিবিরের বক্তাদের তালিকায় তেমন ওজনদার কেউ ছিলেন না। যাঁরা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধারালো ছিলেন চাকুলিয়ার তরুণ ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রামজ্ (ভিক্টর)। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে ভিক্টর বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে টিভি ক্যামেরায় বাইট দিয়েছিলেন, তিনি এখন ‘দেশদ্রোহী’। তা হলে মুখ্যমন্ত্রী কি সমান অপরাধী নন?’’ শুনে প্রায় রে রে করে ওঠেন তৃণমূল সদস্যরা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁর জবাবি বক্তৃতায় ছত্রধর মাহাতোর প্রসঙ্গই তোলেননি।

বস্তুত, বিরোধীদের অভিযোগ, জবাবি ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ বিভাগ নিয়ে খুবই অল্প সময় ব্যয় করেছেন। বারবারই প্রসঙ্গান্তরে চলে গিয়েছেন। এ দিন বিরোধীদের বক্তৃতার সময়ে সভাকক্ষে ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। যা নিয়ে সিপিএমের আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘অনেক দিন বিধায়ক আছি। মন্ত্রীও ছিলাম। দেশ-বিদেশের আইনসভা দেখেছি। এমন কোনও রাজ্য দেখিনি, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীই বিধানসভায় আসেন না।’’ এর প্রতিবাদ জানিয়ে আনিসুরের বক্তব্যের পরেই এ দিন ওয়াকআউট করেন বাম বিধায়করা।

জবাবি ভাষণে বামেদের কটাক্ষ ছুড়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলার সময় বলবে, শোনার মুরোদ নেই। গণতন্ত্রের প্রতি যদি আস্থা থাকত, তা হলে ধৈর্য ধরে আমার উত্তর অন্তত শুনতেন।’’ কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, ‘‘কলকাতায় ভোট লুঠ হয়েছে।’’ তা শুনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কিচ্ছু হয়নি। কোথাও কিচ্ছু হয়নি। শুধু কলকাতায় একটি ঘটনা ঘটেছে, তা-ও ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে।’’ উল্টে মনোজবাবুকেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘যদি কিছু হতো, তা হলে কলকাতায় (আপনারা) ৫টি আসন জিতলেন কী ভাবে?’’ তাঁর সাফ কথা, কলকাতা পুরভোটে কোনও অশান্তি হয়নি। অন্যান্য পুরসভায় ‘ছোট ছোট’ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কাটোয়ায় তো তৃণমূলেরই এক জন খুন হয়েছেন।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বীরভূমের সাত্তোরের প্রসঙ্গ তোলেন। এসপি-র রিপোর্টের উল্লেখ করে তাঁর দাবি, ‘‘সাত্তোরে কোনও ঘটনা ঘটেনি। সংবাদমাধ্যম সঠিক খবর দেখায়নি।’’ শুনে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি তো নিজে গিয়ে দেখে এসেছি। বেশ কয়েক জন মহিলা পর্যন্ত আহত হয়েছেন।’’ মমতা তাঁকে কার্যত থামিয়ে দিয়ে বলেন ‘‘ভাই, আপনি রাজনীতি করার জন্য এ সব বলছেন। আপনি যে ঘটনার কথা বলছেন, সেটা অন্য ঘটনা।’’ পিংলা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য,‘‘ওখানে বাজি কারখানা ছিল। তাতে বিস্ফোরণ হতেই পারে। সিআইডি তদন্ত করছে।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পিংলায় মৃতদের পরিবার-পিছু ক্ষতিপূরণ দিলেও সেখানে ‘বেআইনি কাজ’ হচ্ছিল। তাঁর যুক্তি, ‘‘বেআইনি কাজকে মহিমান্বিত করতে আমি সেখানে যাব কেন?’’

সিআইডি-কে কিন্তু এ দিন ঢালাও শংসাপত্র দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘এখন সিআইডি আর আগের মতো নেই’’ বলে মন্তব্য করে তিনি জানিয়েছেন, রানাঘাট-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই নিতে চায়নি। সিআইডি-ই দোষীদের গ্রেফতার করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিরোধীরা হতাশা থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে হইচই করছে।



মন্তব্য চালু নেই