রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত

ভারতের জম্মু শহরে সম্প্রতি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বিরোধী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। শহরের দেয়ালে ও উচুঁ ল্যাম্পপোস্টে বড় বড় হোডিংয়ে লেগেছে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি তাড়ানোর ব্যানার, পোস্টার। জম্মুর হিন্দু ডোগরা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী প্রভাবশালী প্যান্থার্স পার্টি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে বিবিসি-র প্রতিবেদনে জানানো হয়।

পোস্টার, ব্যানারে জম্মুবাসীদের ‘জেগে ওঠার’ আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশিরা চলে যাও।’ নিচে লেখা হয়েছে নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ডোগরাদের নিজস্ব পরিচয় রক্ষায় জম্মুবাসীরা ঐকবদ্ধ্য হোন।

জম্মু শহরের নারোয়াল এলাকাতেই মূলত মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাস। জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থার তত্বাবধানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী জম্মুতে বসতি গড়েছে। কিছুদিন আগে তাদের ওই বসতি আগুন পুরো ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার এই নতুন প্রচারণার ফলে তারা আতঙ্কে রযেছেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থী নারোয়ালের বাসিন্দা জাহিদ বলেন, অনেকেই কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরে। শহরের মানুষের মধ্যে যদি এরকম প্রচারণা চলতে থাকে, তাহলে কারও ওপর হঠাৎ হামলা হয়ে যেতেই পারে। সেটাই আতঙ্কের।

এদিকে জম্মু-কাশ্মিরে প্যান্থার্স পার্টির রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বিরোধী প্রচারণার মধ্যেই হাইকোর্টে এ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে। মামলার বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষই বিজেপির নেতা। মামলাকারীর আইনজীবী সুনীল শেঠি রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র।

শেঠি বলেন, ‘মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ও অবৈধভাবে ভারতে আসা বাংলাদেশিরা জম্মু-কাশ্মিরের মতো জায়গায় থাকলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। কারণ রাজ্যে জঙ্গিরা সক্রিয়। এরপরেও যদি রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে থাকতে শুরু করে, তাহলে বিপদ আরও বাড়বে। দেশবিরোধী শক্তিগুলি এদের কাজে লাগাতে পারে। তাছাড়া এদের যদি আশ্রয় দিতেই হয় তাহলে মিয়ানমার বা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে এত হাজার কিলোমিটার দূরে জম্মুতে আসতে দেওয়া হচ্ছে কেন?’

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দাবি, তারা তো বেআইনিভাবে জম্মুতে থাকছেন না। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের নির্দেশেই তাদের সেখানে জায়গা করে দেয়া হয়েছে।

শরণার্থী জাহিদ বলেন, তাদের যদি কিছু বলার থাকে তো জাতিসংঘে গিয়ে বলে আসুন। জম্মুতে একজনও এমন রোহিঙ্গা নেই, যার কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী শংসাপত্র নেই অথবা যিনি শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের দিল্লি অফিসে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দেননি। প্রত্যেকের বৈধ কাগজ রয়েছে।

জম্মুতে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করেন। দিল্লিসহ অন্যান্য কিছু শহরেও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার শরণার্থী শিবির রয়েছে।

গবেষকদের দাবি, বর্তমানে ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা আনুমানিক ৫০ হাজারেরও বেশি। এরা মুম্বাই, হায়দ্রাবাদের মতো শহরে ছড়িয়ে রয়েছে। এদের সকলের ভারতে শরণার্থী হিসাবে থাকার বৈধ কাগজ নেই।



মন্তব্য চালু নেই