রেগে গেলে ওবামা কী করেন

৫ বছর ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঘনিষ্ঠ সহকারি হিসেবে কাজ করেছেন ২৬ বছর বয়সী রেগি লাভ। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা থেকে শুরু করে পরবর্তী ক’বছর ওবামাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে ডিউক ইউনিভার্সিটির ফুটবল ও বাস্কেট বল তারকাখ্যাত রেগির। ওবামাকে খাবার দেয়া, তার লাগেজ বহন করা,

ওবামার পোশাক কিনে দেয়া, তাঁর সঙ্গে বাস্কেট বল খেলা কিংবা তাঁর সন্তানদের সময় দেয়া সব কাজই করতেন রেগি। সেসময় ওবামার ভালোবাসা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখেছেন রাগের মাত্রাও। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাটানো সে সময়গুলোকে ‘পাওয়ার ফরওয়ার্ড: মাই প্রেসিডেন্সিয়াল এডুকেশন’ নামে এক স্মৃতি কথায় তুলে ধরেন রেগি লাভ। সে স্মৃতিকথায় রেগি কীভাবে ওবামার রাগান্বিত রূপ তুলে ধরেছেন তাই একবার জেনে নেয়া যাক-

ওবামার ব্রিফকেস আর ওয়ালেট হারানোর পর যা হল

২০০৭ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চলার সময় হঠাৎ করে বারাক ওবামার ব্রিফকেসটি হারিয়ে ফেলেন রেগি। ওই ব্রিফকেসে ছিল ওবামার চাবি, ওয়ালেট, ক্রেডিট কার্ড এবং সাউথ ক্যারোলিনায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিতর্কে অংশ নিতে প্রয়োজনীয় নোট। ওই সময়কার পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে রেগি বলেন, “একদিকে বিমান উড়ছে আরেকদিকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ব্যাগ নিখোঁজ। আমি কী করব তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছিলাম। বার বার ঘামছিলাম। তবে সতর্ক ছিলাম ছিলাম যেন প্রেসিডেন্ট তাঁর ব্যাগ নিখোঁজ হওয়ার খবর কোনভাবে জানতে না পারেন।

গোপনে যোগাযোগ করলাম নির্বাচনী প্রচারণার এক অর্থ সহায়তাকারীর সঙ্গে। পরে তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের খবরটি জানালেন। তারা ব্যাগটি খুঁজেও পেল আর আমাকে বলা হল ক্যারোলিনার ওই বিতর্কে অংশ নিতে আসছেন এমন একজনের কাছে ব্যাগটি পাঠানো হচ্ছে। আমিও নিশ্চিত হলাম যে হয়তো ওবামা জানার আগেই ব্যাগটি আমি হাতে পাব। তবে বিধি বাম। বিমান থেকে নেমে ব্যাগের কথা জিজ্ঞিস করলেন ওবামা। আমি বললাম, ওইটা তো ফ্লোরিডা থেকে আসছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন ওবামা। বললেন, “ও তুমি ব্যাগটা ফ্লোরিডাতেই ফেলে এসেছো। একটা যা তা তুমি।”

ap080927041535

ব্রিফকেস পাওয়ার পর…..

ক্যারোলিনা থেকে পরবর্তীতে কলম্বিয়া যাওয়ার পথে পুরো রাস্তাজুড়ে রেগিডের সঙ্গে কোন কথা হলো না ওবামার। রেগিড জানান, ওই সময়ে আমি ভাবছিলাম এ বুঝি চাকরিটা গেলো। কলম্বিয়ায় ক্যাম্পেইন অফিসে পৌঁছার পর আমাকে রুমে ডাকলেন ওবামা। বললেন, ‘দেখ রেগি, আমি মনে করি তুমি এক অসাধারণ মানুষ। কিন্তু তুমি যদি কাজটা না করতে পার, তাহলে আমি অন্য কাউকে বলি এ কাজটা করতে। যদি আমাকে সারাক্ষণ তোমার কাজ নিয়েই ভাবতে হয়, আমি তাহলে আমার কাজ করব কখন? নিজের কাজের মধ্যে সমন্বয় রাখো রেগি আর আমাকে আমার কাজ করতে দাও।’ এ বলে রুম থেকে বের হয়ে যান ওবামা।”

অতিরিক্ত শিডিউল বুকিংয়ের পর

২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ক্যাম্পেইনের জন্য একের পর এক অনেকগুলো ইভেন্টের শিডিউল পড়ে যায় ওবামার। সেসময় রেগিকে দায়িত্ব দেয়া হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জানানো যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ইভেন্টে অংশ নিতে দেরি হবে। অথচ তা করতে ব্যর্থ হলো রেগি। তার বর্ণনা অনুযায়ী ওবামা রেগে এস রেগিকে বললেন, সব উল্টো পাল্টা করে দিয়েছো তুমি।
বাতাসের গতিতে রুম থেকে বের হয়ে, আরেক সহকারি নিকোলসনকে ওবামা বললেন, “তুমি রেগির সঙ্গে কথা বলো। এ নিয়ে আমি আর ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই না।”

তবে অবশ্য এ ফাঁকে আরেকটা ভুল করে ফেলেছেন রেগি। ওবামার মধ্যাহ্নভোজের অর্ডারটা ভুল দিয়ে ফেলে রেগি।

obama-eating5

এরকম প্রায়ই রেগি আর বারাক ওবামার মধ্যে খুনসুটি চলতো। কখনো চিৎকার করে আবার কখনোবা নিরব হয়ে নিজের রাগ প্রকাশ করতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রেগি জানান, ওবামার রাগের অবস্থা খুব বেশি খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে তিনি নিরব হয়ে যান। তিনি বলেন, “ওবামার কাছে তিরস্কৃত হওয়ার চেয়ে তার মৌনতাই অনেক বেশি ভাবিত করে।”



মন্তব্য চালু নেই