রক্তে মাখা পোশাক আর কিনবে না ক্রেতারা!

সাভারের রানা প্লাজা ধস নিতান্তই কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনাকে বিশ্বের ভয়াবহতম ট্র্যাজেডি হিসেবে মনে করা হয়। এই দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি মানবতাবোধের প্রশ্নও উঠেছে বিশ্ব দরবারে।

বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির প্রথম বার্ষিকীতে এ নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনদেজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে এবং তাদের কাজের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত করতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আর শ্রমিকদের রক্তে মাখা পো‍শাক কিনবে না!

বিবৃতিতে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠনের (বিজিএমইএ) কড়া সমালোচনা করে মার্কিন এই জনপ্রতিনিধি বলেন, এখনই সময় বাংলাদেশের জন্য, পোশাক খাতে তাদের যে সকল সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করতে হবে অচিরেই।

মেনেনদেজ বলেন, বাংলাদেশের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রায় এক হাজার ১৩০ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনা পুরো বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সীমিত। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করা হয়। তবু বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যুটি সুরক্ষিত নয়।

এ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মেনেনদেজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকরাও শ্রমিকদের সুষ্ঠু অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে উদাসীন। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ’কে বলিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ করতে অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়। নয় তো আগামীতে রানা প্লাজার মতো বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পোশাক শিল্পেই ধস নামতে বাধ্য।

তিনি বলেন, একজন গার্মেন্ট মালিকই পারেন তার কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চত করতে। এটা একজন মালিকের দায়িত্ব। আর তা হলেই মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে প্রতিষ্ঠা পাবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকারের দাবিটিও।

ট্রেড ইউনিয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রবার্ট মেনেনদেজ বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিক সংগঠন নেই। এতে শ্রমিকদের অধিকার ও মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের দাবি জোরালো হয় না। কারখানার মালিকদের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের বরাবরই দূরত্ব লক্ষ্য করা যায়।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশে মালিক পক্ষের হাতে কয়েকজন শ্রমিক নেতার লাঞ্ছনার ঘটনা ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিক সংগঠনগুলো কার্যকরের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, শ্রমিক নেতারা মালিক পক্ষের সুদৃষ্টির আওতায় না পড়ে উল্টো লাঞ্ছনার শিকার হবে, তা-ও হতে পারে না।

এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আগেও প্রতিবাদ করেছিল এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও বিজিএমইএ’র এই সহজ বার্তাটি বোঝা উচিত যে, তারা যদি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেয় তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে আর রক্তেমাখা পোশাক কিনবে না।



মন্তব্য চালু নেই