যে দ্বীপের মানুষ ভুলে গিয়েছে মৃত্যুর স্বাদ, জেনে নিন তাদের দীর্ঘায়ুর গোপন রহস্য

গ্রীসের একটি দ্বীপ ইকারিয়া। এই দ্বীপের মানুষজন যেন মৃত্যুর স্বাদ নিতেই ভুলে গিয়েছেন। সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো তারা যেন অসুস্থ হতেও ভুলে গিয়েছেন। এই দ্বীপের মানুষ ক্যান্সার, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ এবং স্মৃতিশক্তির নানা সমস্যা ধরনের রোগের থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার বেশ ভালো কিছু উপায় খুঁজে নিয়েছেন। বিশ্বের নানা পরিসংখ্যানে এই ছোট্ট দ্বীপের উদাহরণ সকলকে তাজ্জব করে দিয়েছে। সকলের মনে একই প্রশ্ন, তাদের দীর্ঘ জীবন এবং এই রোগশোক থেকে মুক্ত থাকার গোপন রহস্যটি আসলে কী?

এই ছোট্ট দ্বীপের একজন লেখিকা যিনি বেশ কম সময়ই পার করেছেন এই দ্বীপে, তিনি তার একটি নতুন বই ‘ইকারিয়াঃ লেসন অন ফুড, লাইফ অ্যান্ড লনজিভিটি ফ্রম দ্য গ্রীক আইল্যান্ড হোয়ার পিপল ফরগেট টু ডাই’এ এই দ্বীপের মানুষের দীর্ঘায়ু জীবনের মূলমন্ত্র লিখেছেন। ডিয়ানে কোচিলাস তার লেখার মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীকে এই দ্বীপের মানুষের রোগমুক্ত দীর্ঘায়ু জীবনের মূল রহস্য। চলুন তবে তার ভাষাতেই জেনে নেয়া যাক এই দ্বীপের মানুষের নীরোগ দীর্ঘায়ু জীবনের ৬টি গোপন রহস্য।

তাজা, পুষ্টিকর এবং মৌসুমি খাবার খাওয়া
এই দ্বীপটিতে মাংস পাওয়া যায় না। অনেক বড় কোনো উৎসবে বছরে ২-৩ বার মাংস খান এই দ্বীপের মানুষজন। এছাড়া যারা মুরগী পালেন তারা হয়তো মাসে একবার মুরগীর মাংস খেয়ে থাকেন। তাদের ভরসা করে থাকতে হয় ক্ষেতের ফসল, শাকসবজি এবং সমুদ্রের মাছের ওপর। এবং এইসকল পুষ্টিকর, তাজা ও মৌসুমি খাবারই তাদের দীর্ঘায়ু জীবনের মূল রহস্য।

যা রয়েছে তা নিয়েই সুখী জীবন যাপন
লেখিকা তার বইয়ে বলেন, এই দ্বীপের মানুষজন কখনো লোভ করে কিংবা অনেক বেশি কিছু আশা করে তার পেছনে ছোটেন না। এই দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা অনেক বেশি সহজ। এখানকার মানুষজন অনেক বেশি সহজ সরল। অযথা কোনো কিছু নিয়ে নিজেদের মানসিক শান্তি নষ্ট করেন না তারা। যা আছে নিজের কাছে তা নিয়েই বেশ সুখী। এই মানসিক শান্তিটুকু দেহের ওপরেও প্রভাব ফেলে অনেক। আর মানসিক দিক থেকে সুখী মানুষ সেকারণেই অনেক রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যান। লাভ করেন দীর্ঘ জীবন।

পরিমিত বিশ্রাম গ্রহণ
ইকারিয়া দ্বীপের মানুষজন ঘুমাতে বেশ পছন্দ করেন। সত্যি বলতে কি এই দ্বীপের অসাধারণ আবহাওয়া এবং ফ্রেশ বাতাস ঘুমের জন্য বেশ উপযোগী। এই দ্বীপের মানুষজন প্রায় ১০ ঘণ্টার মতো ঘুমান। তাদের আরও একটি অভ্যাস রয়েছে। তা হচ্ছে দুপুরের পরে একটু ঘুমিয়ে নেয়া। বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময়। সকালে ৯টায় ঘুম থেকে উঠে কর্মজীবন চলে টানা ৭টা পর্যন্ত। এরপর মাঝে একঘুমে প্রায় ১১টা। তারপর ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে আবার ঘুম।

খারাপ স্মৃতি ভুলে যাওয়া
এই দ্বীপের মানুষজনের একটি বাণী রয়েছে, ‘Don’t hold the bad in’। অর্থাৎ নিজের মধ্যে খারাপ কিছু ধরে রেখো না। যত খারাপ স্মৃতি এবং খারাপ সময় পার করে আসা হয় তা ভুলে যাওয়াই মঙ্গল। এই দ্বীপের মানুষজনের আরও একটি ভালো দিক রয়েছে। সেটি হচ্ছে এই দ্বীপের মানুষজন খারাপ স্মৃতি ভুলে যাওয়ার সাথে সাথেই নিজের মধ্যকার খারাপ দিকও ভুলে গিয়েছেন। তারা অনেক বেশি সৎ, বন্ধুভাবাপন্ন এবং ক্ষমাপ্রবণ। তারা মানসিক চাপ নিতেও একেবারেই নারাজ। এইসকল গুণ তাদের শরীর ও মন দুটোর উপরেই প্রভাব ফেলে।

শারীরিক কিছু সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান
এই দ্বীপের মানুষজন কেমিক্যাল এবং কোম্পানিতে তৈরি ঔষধের চাইতে প্রকৃতির উপরেই বেশি ভরসা করে চলেন। এই দ্বীপের মানুষজন প্রাকৃতিক নানা ধরনের হার্ব, জড়িবুটি অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছেন। তাদের নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ আলাদা।

হাঁটাহাঁটি করা
দীর্ঘায়ু এবং নীরোগ জীবনের সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে হাঁটাহাঁটি করা। এই দ্বীপের মানুষজন হাঁটতে পছন্দ করেন অনেক। বেশ বয়স্ক মানুষজনও অনেক হাঁটাহাঁটি করেন। এতে করে দেহের ব্যায়াম হয়। যা দেহের সুস্থতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।



মন্তব্য চালু নেই