যেসব উপায়ে ধ্বংস হবে পৃথিবী

পৃথিবী কী করে ধ্বংস হবে? চমকে উঠলেন? পৃথিবী ধ্বংস হবে? সত্যিই? কবে? নিশ্চয়ই এটাই ভাবছেন আপনি। না! ধ্বংস হচ্ছে না পৃথিবী আপাতত। কিন্তু যদি কোনোদিন হয়ে যায়ই তাহলে এর পেছনে ঠিক কী কী কারণ থাকতে পারে? আসুন জেনে নিই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পেছনে থাকা সম্ভাব্য যুক্তিসংগত কিছু কারণ।

১. সূর্যরশ্মির ঝড়
সূর্যের উপস্থিতি পৃথিবীর টিকে থাকবার জন্যে প্রচন্ড দরকার। গাছপালা, মানুষ, পশু-পাখি, এমনকি নদ-নদী খাল-বিল সমুদ্রসহ পানির সব উৎসের ঠিকঠাক টিকে থাকবার জন্য আমাদের দরকার এই সূর্য। না! সূর্য হারিয়ে যাচ্ছেনা। অথবা গেলেও সে ভয় আমাদের সহসাই করতে হচ্ছেনা। কিন্তু সূর্যের এই না হারিয়ে যাওয়া, দিনের পর দিন উপস্থিতিই আবার হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ। কী করে? বলছি! সূর্যরশ্মি আমাদের গ্রহে খুব দ্রুত সকাল হবার সঙ্গে সঙ্গে এসে উপস্থিত হয়। ছড়িয়ে দেয় এর আলো আর উষ্ণতা। তবে সেটা একটু পাল্টে যায় ঠিক ১১ বছর পরপর। ১১ বছর পর সূর্যের জীবনে আসে সোলার ম্যাক্স, যখন এটি তার সবচাইতে শক্তিশালী সূর্যকিরণটি পৃথিবীতে সেকেন্ডের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। আর খুব দ্রুত সেটা এসে আঘাত হানে পৃথিবীতে। ভাবছেন অতটুকু একটু সূর্যরশ্মি আঘাত কী করে হানতে পারে? পারে! আর পারে যে সেটার জলজ্যান্ত উদাহরণ ১৯৮৯ সালের কানাডার কিউবেক। কিউবেক শহরে সেবার আঘাত হেনেছিল এমনই এক রশ্মি। যেটা কিনা ঠিকঠাক করতে করতে লেগে যেতে পারে কোটি কোটি ডলার আর তার আগেই যেটা কেড়ে নিতে পারে অনেক প্রাণ আর সম্পদ। বিজ্ঞানীদের মতে যদি এমনটাই ঠিকঠাকভাবে চলতে থাকে তাহলে পৃথিবীতে প্রাণকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যম এই সূর্যই হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ।

ভূ-গর্ভস্থ গ্যাস
আমাদের সাগরগুলো এমনিতে বেশ নিরীহ আর যথেষ্ট সুন্দর হলেও বিজ্ঞানীদের কথানুসারে এর একদম গভীরে রয়েছে ক্ল্যাথরেটস নামের একটি স্তর যেখানটায় জমা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস। এমনিতে এটি সাগরের তলায় লুকিয়েই থাকত। তবে দিনকে দিন যে হারে গ্রীন হাউজ এফেক্ট কাজ করছে পৃথিবীতে আশঙ্কা করা হচ্ছে হঠাৎ করেই হয়তো একদিন পানির নীচ থেকে বেরিয়ে বোমার মতন বিস্ফোরিত হবে এই মিথেনের স্তর। আর তখন? প্রচন্ড শক্তিশালী কোনো বোমার আঘাতের মতন তছনছ হয়ে যাবে পৃথিবী।

পারমানবিক যুদ্ধ
বর্তমানে প্রতিটি দেশই পারমানবিক শক্তি অর্জন করছে কিংবা করার চেষ্টা করছে। যদিও প্রচন্ড শক্তিশালী এই অস্ত্রটি ব্যবহারের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী নানারকম সংস্থার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রয়েছে অনেক নিয়ম-কানুন। তবে সমস্যার শুরুটা হয় সেই স্নায়ু যুদ্ধের সময়। সে সময় আমেরিকা আর ইউএসএসআর মুখোমুখি দাড়িয়েছিল একে অন্যের। দুজনের হাতেই ছিল পারমাণবিক অস্ত্র। দিনকে দিন সেটাকে উন্নত করে যাচ্ছিল তারা আর একে অন্যকে ভয় দেখাচ্ছিল। যদিও এই ব্যাপারটা কেবল ভয় দেখানো আর হুমকির ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল, অনেকেই ভেবেছিলেন এবার বুঝি পৃথিবী শেষ হয়ে গেল। সত্যি বলতে কী তখন যুদ্ধটা লেগে গেলে সেটা হতে বেশি সময়ও লাগত না। কিন্তু না! শেষ অব্দি হার মেনে ভেঙে গেল ইউএসসার। একবার ভাবুন তো, তখন দুটি দেশের কাছে অস্ত্র ছিল। তাতেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিল সবাই। আর বর্তমানে? পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে পারমানবিক অস্ত্র। আর যাদের হাতে নেই তারা সাহায্য নিচ্ছে পারমানবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো। তাই মনে করা হয়, কখনো যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়েও যায় সেটার পেছনে পারমাণবিক যুদ্ধের বেশ বড় একটা হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

উল্কা বিস্ফোরণ
আগের গুলোতে কোনো না কোনোভাবে ছিল মানুষের হাত। প্রথম আর দ্বিতীয়টায় মানুষের তৈরি গ্রীন হাউজ এফেক্ট এবং পরেরটাতে মানুষে মানুষে যুদ্ধ- এই তো ছিল পৃথিবী ধ্বংসের সেরা সম্ভাব্য কারণগুলোর ভেতরে কয়েকটি। তবে এবার যেটার কথা বলব সেটা কিন্তু কোনোভাবেই মানুষের তৈরি করা কারণ নয়। এটা তো সবাই-ই জানে যে একটা সময় পৃথিবীতে বাস করত ডাইনোসর। আর সেই ইয়া বড় বড় ডাইনোসরের হঠাৎ করে নেই হয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী করা হয় একটি উল্কাকে। মনে করা হয় পৃথিবী থেকে ৬ মাইল দূর দিয়ে যাওয়ার সময় এখানে বসবাসরত সব ডাইনোসরকে মেরে ফেলেছিল সেটি। বিশেষজ্ঞদের ভেতরে অনেকের ধারণা যদি মানুষ এবং এই পৃথিবী ও এর সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তার কারণও হবে এই উল্কাটি। তবে এবার ছয় মাইল নয়, এক মাইল দূর থেকেই পুরো মানব সভ্যতা আর পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে সেটি। ভয়ের কথা হচ্ছে, মানুষের হাতে পারমানবিক শক্তির মতন এত বড় বড় ব্যাপার থাকলেও এখনো অব্দি সেই উল্কাটিকে ধ্বংস করবার মতন অস্ত্র তৈরি করতে পারেনি কেউ।

সুপার আগ্নেয়গিরি
আমাদের পৃথিবী জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি। এর সংখ্যা প্রায় ৫০০টি। তবে আপনি জানেন কী এই আগ্নেয়গিরির ভেতরে মোট ৪টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যাদের ভেতরে রয়েছে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতন ক্ষমতা। আর এই চারটি আগ্নেয়গিরিকেই ডাকা হয় সুপার আগ্নেয়গিরি নামে। এই চারটি বিশেষ আগ্নেয়গিরির নাম হচ্ছে- আমেরিকার ইয়োলোস্টাইন, ইন্দোনেশিয়ার লেক টোবা, নিউজিল্যান্ডের টাউপো ও জাপানের অ্যায়রা কালডেরা। অন্যদের চাইতে অনেক বেশি আলাদা এই চার আগ্নেয়গিরির কোনো একটা উদগীরণ করলেও সেটি প্রায় ২০০০ মিলিয়ন সালফারিক এসিড বের করে দেবে যাতে কেবল পৃথিবী একা নয়, ঢাকা পড়বে সূর্যও!

ভিনগ্রহবাসী
ভিনগ্রহবাসী? হাসছেন নিশ্চয়। যেটা এখনো আছে কিনা, থাকলেও দেখতে কেমন সেটা কিছুই জানা যায়নি তার জন্যে আবার ভয়? কিন্তু ভয়টা কিন্তু সবার এখানটাতেই। আমরা সত্যিই কেউ জানিনা ভিনগ্রহবাসীরা আছে কিনা। তাই হঠাৎ করে তারা আক্রমণ করে বসতেই পারে। আমরা জানিনা তারা কেমন বা কতটুকু হিংস্র ও পারদর্শী এবং উন্নত। ফলে তাদের সঙ্গে ঠিক কী করে জিতে ফেলা যাবে আর মুক্ত করা যাবে পৃথিবীকে সেটাও আমরা জানিনা। আমাদের এত এত অস্ত্র-শস্ত্র, সেগুলোও সেসময় কোনো কাজে আসবে কিনা তাও আমরা জানিনা। বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছেন ভিনগ্রহবাসীদের সত্যতা জানতে। অনেকে কখনো কখনো পেয়েছেন অদ্ভূত সব আলো, উত্তর, শব্দ এবং ইউএফওর খোঁজ। বেশকিছু স্থানে ভিনগ্রহবাসীদের এই যান দেখা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অনেকে আবার আমাদেরকেই ভিনগ্রহবাসীদের বংশধর মনে করেন। এত এত ধারণা আর তত্ত্বের ভেতর থেকে সত্যিকারভাবে কিছু না বোঝা গেলেও ভিনগ্রহবাসীদের দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনাকে কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না।



মন্তব্য চালু নেই