যেভাবে ইউরোপের চামড়া হলো সাদা

প্রথম ইউরোপীয় মানুষটি মোটেও এখনকার শ্বেতাঙ্গদের মতো সাদা ছিলেন না। তার রং ছিল আরও অনেক বেশি আঁধারের দিকে, যা দেখলে এখনকার ইউরোপীয়ের সঙ্গে মেলানো যাবে না। কিন্তু ওঁরাই বর্তমানীদের পূর্বপুরুষ। বর্তমান ইউরোপীয় সাদা মানুষগুলো- জাতে ককেশীয়। বলা হচ্ছে এ জাতটির উদ্ভব ঘটেছে এই সেদিন, মাত্র ৮০০০ বছর আগে। ৮০০০ বছর নিঃসন্দেহে দীর্ঘসময়, যদিও কালের সামগ্রিক ব্যাপ্তিবিন্যাসের তুলনায় তা নয়। মানুষের মধ্যে ক্রমবিবর্তনে আসা পরিবর্তন অতি ধীর এবং অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে যদি ‘ইউরোপীয় মানুষ’ সংক্রান্ত দ্বিতীয় তথ্যটি দেয়া যায়। ইউরোপে বর্তমান মানুষগুলোর পূর্বপুরুষের আগমন ঘটেছিল প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে। সে তুলনায় আজকের সাদা ককেশীয়দের ক্রম-উদ্ভব তো ‘এই সেদিনের কথাই’ বটে। ইউরোপের আদিপুরুষরা এসেছেন অবধারিতভাবে আফ্রিকা থেকে। সেই আফ্রিকা, যেখানে পরবর্তী সময়ে উত্তরপুরুষদের হাতে ভয়াবহ নিগ্রহের শিকার হচ্ছে মানুষ।

যাহোক, নিরেট তথ্যগুলো উঠে এসেছে মার্কিন নৃতাত্ত্বিক সংস্থার ৮৪তম অধিবেশনে। উপস্থাপিত তথ্যাবলী ইউরোপীয়দের সাদা চামড়া সম্পর্কে জনপ্রিয় প্রচলিত মতটি প্রত্যাখ্যান করে। জনপ্রিয় মতটি ছিল- আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ ১০,০০০ বছর আগে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এটা সঠিক নয়। প্রাচীন শিকারী মানুষ কোথায় থিতু ছিল না। ইউরোপের বিস্তৃত ভূমিতে ক্রমশ ছড়িয়ে গেছে। তুলনামূলক কৌণিক অবস্থানে থাকা সূর্য এবং স্বল্প দৈর্ঘ্যের দিবাভাগ ধীরে ধীরে সাদা চামড়ার উদ্ভব ঘটায়- এমন একটা ধারণাও প্রচলিত আছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এ ধারণাটি ভুল নয় বটে, তবে এটাই সবটা নয়।

স্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে এসেছে পরিবর্তন। সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখে চামড়ার নিচে রঞ্জকের কমবেশি হওয়াটা ক্রমশ খাদ্যাভ্যাসের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ মিথষ্ক্রিয়ায় বিশেষ বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে আধুনিক সাদাদের নিকটতম পূর্বপুরুষদের। খাদ্যাভাসের ভূমিকা সংক্রান্ত আরও একটি সম্পূরক গবেষণায় দেখা যায়, ইউরোপীয় সাদারা আগামী ৫০০০ বছরের মধ্যে দুধ হজম করার ক্ষমতা হারাবেন। তাদের পাকস্থলি আর ল্যাকটোজ জীর্ণ করার ক্ষমতা বজায় রাখতে পারবে না। যাক, কাছাকাছি হলেও সেটা একরকম অপ্রসঙ্গ। বলা হচ্ছে- ইউরোপে এমন তিনটি জিনের উদ্ভব হয়েছিল যেগুলো সে সময়ে চামড়ার রংকে ক্রমশ উজ্জ্বল করে তোলার পেছনে কাজ করেছে। এ জিনধারী শিকারীরা আনুমানিক ৮,৫০০ বছর আগে স্পেন, লুক্সেমবার্গ এবং হাঙ্গেরিতে আসেন- তেমনটাই প্রমাণিত। দূর উত্তর ইউরোপে সাত ব্যক্তির জীবাশ্মে সাদা ত্বকের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত SLC24QA5 এবং SLC45A2 জিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ক্রমে প্রাচ্য থেকে কৃষিজীবী মানুষেরা ইউরোপে এসেছে, স্থানীয়দের সঙ্গে মিলনে বংশ বাড়িয়েছে।

european-2

ক্রমেই তাদের শরীরে সৃষ্ট পরিবর্তন অনুক্রম মেনে চলে গেছে উত্তরপুরুষদের কাছে। দক্ষিণ ইউরোপের শিকারীরাও এসেছে মিলনযজ্ঞে, তাদের কাছেও গেছে উত্তর ইউরোপের মানুষ। পরবর্তী ৫,৮০০ বছরের ইতিহাস আধা শ্বেতাঙ্গদের ধীরে ধীরে ঝেঁটিয়ে শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা বাড়ানোর ইতিহাস। মধ্যখানে প্রায় ৪,৫০০ বছর আগে আরেক দফায় প্রচুর ভিনরঙা মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করেছে। ওখানকার মানুষের সঙ্গে মিশেছে। পূর্বপুরুষেরা প্রায় ৮০০০ থেকে ৩০০০ বছর আগে থেকে ইউরোপে বাস করছে এমন ৬৯ জন মানুষের ডিএনএ (ডি-অক্সি রাইবোনিউক্লিক এসিড) পরীক্ষা করেছিলেন পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃতাত্ত্বিকরা। তাদের জিনে সমস্ত কিছু স্মৃতি হয়ে লিপিবদ্ধ আছে।



মন্তব্য চালু নেই