যুক্তরাষ্ট্রের লিবার্টি মেডেল পেলো মালালা

পাকিস্তানের নারীশিক্ষা আন্দোলনের কর্মী ও শান্তিতে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক লিবার্টি মেডেল গ্রহণ করেছে। মালালা পুরস্কারের এক লাখ মার্কিন ডলার তার জন্মভূমি পাকিস্তানে শিশুদের শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করার অঙ্গীকার করেছে।
মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা বঞ্চিতদের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে আত্মনিবেদন এবং প্রতিকূলতার সামনে সাহস ও পরিবর্তনের ক্ষমতার জন্য মালালা এ পুরস্কার পেয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে (এনসিসি) মালালার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
পুরস্কার গ্রহণের সময় ১৭ বছর বয়সী মালালা জানিয়েছে, পুরস্কার হিসেবে পাওয়া এক লাখ মার্কিন ডলার পাকিস্তানের শিশুদের শিক্ষার উন্নয়ন ও সহায়তায় দান করা হবে।
মালালা বলেন, ‘আমি এই মেডেল পেয়ে খুবই সম্মানিত বোধ করছি। এই সম্মান নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ ও প্রত্যেক শিশুকে অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার যুদ্ধে অবিচল থাকতে আমাকে আরো অনুপ্রাণিত করবে।’
মালালা বলে, দারিদ্র্য, অজ্ঞতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো অস্ত্র শিক্ষা। যুদ্ধ ও সংঘাতকে ‘না’ বলার জন্য বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মালালা।
গত জুনে পুরস্কারটির জন্য মালালার নাম ঘোষণা করা হয়। এত অল্প বয়সে এর আগে কেউ এই পুরস্কার পায়নি।
এনসিসি চেয়ারম্যান জেব বুশ বলেন, ‘সমতা ও স্বাধীনতার জন্য মালালার সাহসী সংগ্রাম প্রমাণ করে, একজন আবেগপূর্ণ ও দায়িত্বশীল নেতাই সংস্কারের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার শক্তি রাখেন। এ ক্ষেত্রে বয়স কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়।’
১৯৮৯ সাল থেকে লিবার্টি মেডেল দেয়া হচ্ছে। প্রথমবার পুরস্কারটি দেয়া হয় পোল্যান্ডের ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ক সংগঠন সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা লিচ ওয়ালেসাকে। এছাড়া এ পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
এর আগে মালালা গত ১০ অক্টোবর শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা ভারতের কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে এ বছর যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পায়। আগামী ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কারের প্রবক্তা বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে নরওয়ের রাজার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মিঙ্গোরা শহরে মালালার জন্ম। মালালা প্রথম সবার নজর কাড়ে ২০০৯ সালে। ওই সময় তার লেখা ডায়েরি বিবিসির উর্দু বিভাগে প্রকাশিত হয়। চরম কট্টরপন্থী তালেবানের অধীনে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়িত নারীদের করুণ চিত্র ফুটে ওঠে তার সেই লেখায়।
মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অধিকার নিয়ে কাজ করার অপরাধে ২০১২ সালে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যাকায় নিজ বাড়ির কাছে এক তালেবান জঙ্গি তার মাথায় গুলি করে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাজ্যে আনা হয়। সেই থেকে সে যুক্তরাজ্যেই রয়েছে।


মন্তব্য চালু নেই