‘মোদি ভাঁড় হলে রাহুল কৌতুক’
দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে কংগ্রেস সমর্থকদের সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিকে এভাবে উপস্থাপন করা হয়, জোকারের পোশাকে। ভারতের ক্ষমতার রাজনীতিতে ব্যর্থতম রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস বর্তমানে অনেকটাই কোণঠাসা এবং ভারতের বেশির ভাগ মানুষই দলটির ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ ছবিটি প্রকাশিত হলে বিজেপি সমর্থক জনৈক ‘স্মিত জবস’ মন্তব্য করেছেন, ‘মোদি যদি কৌতুক নিয়ে খেলা করা ভাঁড় হন, তো রাহুল গান্ধি এক মূর্তিমান কৌতুক।’ এ বছর ২৬ মে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীনতার এক বছর পূর্ণ হলো। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সংবাদভিত্তিক পত্রিকা মিন্ট এক জনমত জরিপে দেখিয়েছে এখনও ৭৪ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক মনে করেন নরেন্দ্র মোদি ভালো প্রধানমন্ত্রী। ৪৭ শতাংশ মনে করেন, তিনি রীতিমতো ভালো করছেন। তবে প্রাকনির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে মোদির জনপ্রিয়তা যতটা ছিল, সে বছরই অগাস্ট মাসে তা প্রায় আট শতাংশ কমে আসে।
মোদি সরকারকে কংগ্রেস ভাঁড় হিসেবে দেখানোর যুক্তি হিসেবে সামনে নিয়ে এসে থাকে বাণিজ্যিক খাত ও দুর্নীতিদমনে যে অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন তা রাখতে না পারার বিষয়টিকে। আরও দেখান, কৃষকদের দুর্দশা লাঘবে মোদি সরকার এতোটাই ব্যর্থ যে এ বছর খরায় ফসল নষ্ট হওয়ায় শতাধিক কৃষকের আত্মহনন ঠেকাতে পারেনি মোদির জোট সরকার, এটিও একটি কারণ। এছাড়া সমাজকল্যাণমুখী বাজেট অনেকটা ছেঁটে ফেলা হয়েছে যা গ্রামমুখী উন্নয়নকে থমকে দিয়েছে অনেকটাই, কারণগুলোর আরও একটি। আবার মোদি যে ১০০ ‘স্মার্ট শহরের’ কথা বলেছিলেন, তারও কোনো খোঁজ নেই আর, গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো আজও নোংরা এবং অব্যবস্থাপনার ভরভরন্ত রয়ে গেছে, ব্যর্থ হয়েছে ডিজিটালকরণ। সেইসঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতি যে গোল্লায় গেছে তার প্রমাণ হিসেবে কংগ্রেস সমর্থকেরা নিয়ে আসেন চার্চে উপর্যুপরি হামলার ঘটনাকে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হিসেবে নির্দেশ করেন ক্রমবর্ধমান খুন, ধর্ষণের ঘটনার ত্বরিৎ বিচারহীনতাকে। অবশ্য বিজেপি সমর্থকেরা মোদির গুণগান গাইছেন এ বলে যে, তিনি প্রথমবারের মতো ভারতকে আন্তর্জাতিক মিত্রতার বলয়নির্মাণে সঠিক পথে এগিয়ে নিচ্ছেন। ভারত সম্পর্কোন্নয়নে নেমেছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, চীনের সঙ্গে। আর মোদি ক্রমশ পরাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সহায়তাকারী প্রতিবেশীবান্ধব রাজনীতির উন্নয়নে, সুসম্পর্ক চাইছেন বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে।
আর যুদ্ধত্রস্ত ইয়েমেন থেকে স্বদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে এসে, নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ত্বরিৎ সহায়তা প্রদান করে, উদ্ধারকার্য চালাতে জরুরি ভিত্তিতে সেনাপ্রেরণে হৃদ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এসবই ইতিবাচক রাষ্ট্রনীতির প্রমাণ। ভারতের একাধিক অর্থনীতিবিদ রায় দিয়েছেন, মোদি ধীরে এগোলেও অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল অর্থনীতি নির্মাণে এগিয়ে চলেছেন ইতিবাচক পথে। আর উৎপাদনখাতেও যে অচিরেই আসতে পারে বিপ্লব তার প্রমাণ হলো, বিদ্যুৎখাতসহ অপরাপর শিল্প ক্রমশ সমৃদ্ধির পথে। আর স্বল্প ও নিয়মিত বিরতিতে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরবে উপস্থিত থেকে মোদি তরুণদেরও বন্ধুস্থানীয় হয়ে উঠছেন মোদি। সামগ্রিক বিচারে মনে হয়, নরেন্দ্র মোদি যদি বিরোধীদলগুলোর প্রতি আরও নমনীয়, ওপরতলার আমলাতন্ত্রে আরও স্বচ্ছতা আনয়নে আরও তৎপর, আন্তর্জাতিক মিত্রতা নির্মাণে আরও খোলামেলা ও যুগপৎ কৃষক এবং বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ানোয় সর্বোচ্চ শুভাকাঙ্ক্ষা প্রমাণ করত পারেন, তবে অভিযোগগুলোও ফিকে হয়ে আসতে সময় নেবে না।
মন্তব্য চালু নেই