মোদিকে কি নামতে হবে হর্স ট্রেডিংয়ে?

ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেশটির সব প্রচারমাধ্যম বলছে, নরেন্দ্র মোদির সম্ভাবনাই বেশি। ভোটের পর বুথফেরত ভোটারদের ওপর চালানো জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ আভাস দিচ্ছে গণমাধ্যম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি কি পারবেন একটি স্থিতিশীল সরকার উপহার দিতে? নাকি একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে? আর ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হলে মোদিকে নামতে হবে হর্স ট্রেডিংয়ে। নড়বড়ে একটি কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিতে হবে।

১২ মে লোকসভার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জনমত যাচাই ও বুথফেরত ভোটারদের ওপর চালানো জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, বিস্তর ফারাক। বলা হয়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট পেতে পারে সর্বোচ্চ ৩৪০টি আসন, সর্বনিম্ন ২৪৯টি। আর ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সর্বোচ্চ ১৪৮টি আসন পেতে পারে ও সর্বনিম্ন ৭০টি। সরকার গঠনের জন্য দরকার ২৭২টি আসন।

নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে।

বিশ্বের বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশে জনমত ও বুথফেরত ভোটারদের ওপর চালানো জরিপের ফলাফল দেখে ধরে নেওয়া হয়, কোন দল বা জোট জিততে চলেছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে সেটা বলার উপায় নেই। কেননা, নির্বাচনে রাজ্যের স্থানীয় প্রভাব ও ভোট নিয়ে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণের অভাবের ফলে কারা জিতবে, তা বলা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।

আগের নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জনমত যাচাইয়ের কোনোটিই সঠিক ফলাফল দেয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে উল্টো ফলাফল এসেছে। ২০০৯ সালে এনডিটিভি, আজ তক ও জি নিউজ পরিচালিত জনমত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছিল, বিজেপি ও এর মিত্ররা পাবে ২৩০ থেকে ২৫০টি আসন। কংগ্রেস ও এর মিত্ররা পাবে ১৭৬ থেকে ২০৫টি। কিন্তু ভোট গোনা শেষে দেখা গেল, বিজেপি ও এর মিত্ররা পেয়েছে ১৮৯টি আসন। আর কংগ্রেসের আসনসংখ্যা ২২২।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও যে এমনটা ঘটবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়?

তবুও এবার বুথফেরত ভোটরদের ওপর চালানো জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট যদি সর্বোচ্চ ৩৪০ আসনেই জেতে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। অতি সহজেই কারো সমর্থন ছাড়াই সরকার গঠন করতে পারবে তারা। আর নরেন্দ্র মোদি হবেন সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বিজেপির বিরুদ্ধবাদীরাও এবার মানতে বাধ্য হবেন যে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট যেকোনো দল কিংবা জোটের চেয়ে বেশি আসন পাবে। ভোটও পাবে বেশি। তারা এ কথাও মানবেন যে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার মতো রাজ্যেও ভোটারদের মনে জায়গা করে নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। এর আগে এসব রাজ্যে বলতে গেলে বিজেপির খুব একটা জনসমর্থন ছিল না।

এবার ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৬.৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতে বিজেপি ও তার মিত্রদের ম্যান্ডেট আরো জোরদার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুথফেরত ভোটারদের ওপর চালানো জরিপ অনুযায়ী, কংগ্রেস কিংবা আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির সরকার গঠনের সম্ভাবনা খুবই কম। সুতরাং এ কথা বলা যেতে পারে যে, বিজেপি জিততে চলেছে। এবং নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিতে যাচ্ছেন।

এর আগে ১৯৮৪-৮৫ সালের সাধারণ নির্বচনে ভোট পড়েছিল ৬৪ শতাংশ।

বিজেপি সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় ২৭২টির চেয়ে কম আসন পেলে একটি টেকসই সরকার গঠন করতে তাদের অনেক ঘাম ঝরাতে হবে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ২৪৯টি আসনে জিতলে হবে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনের জন্য মোদিকে নামতে হবে হর্স ট্রেডিংয়ে।

নয় পর্যায়ের এই ম্যারাথন সাধারণ নির্বাচন সফলতার সঙ্গে আয়োজন করায় নির্বাচন কমিশন অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এর প্রশংসাও করেছে দেশটির সব পত্রপত্রিকা।



মন্তব্য চালু নেই