মিয়া লাভ: ওবামার দুঃস্বপ্নের কৃষ্ণাঙ্গ নারী

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভেতর দিয়ে শুরু হলো নির্বাচনী হাওয়া। যদিও এই হাওয়া ডেমোক্রেটদের শরীরে লাগার আগেই লেগেছে রিপাবলিকানদের শরীরে। সিনেটের মোট ১০০ আসনের মধ্যে গত মঙ্গলবার ৩৬ আসনে নির্বাচন হয়। যার মধ্যে ৩৩ আসনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে জয় নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকানরা। আর এরফলে সিনেটের ৫২টি আসন এখন রিপাবলিকানদের দখলে। এর বিপরীতে ডেমোক্রেটিক পার্টির আসন ৪৫টি (ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সমর্থন দেওয়া দুই স্বতন্ত্র সিনেটরসহ)। তবে রিপাবলিকানদের এই জয়ের মিছিলে অগ্রগামী হলেন মিয়া লাভ নামের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী। রিপাবলিকানদের হয়ে উটাহ অঙ্গরাজ্য থেকে জয়ী হয়ে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে যাচ্ছেন।

প্রথমত, ১৮৬৫ সালে শেষ হওয়া মার্কিন গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী কয়েক বছরের কথা বাদ দিলে ৩৮ বছর বয়সী মিয়া লাভই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যিনি রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উটাহ অঙ্গরাজ্য থেকে জয়ী হয়ে প্রতিনিধি পরিষদে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, তিনিই প্রথম খ্রিষ্টান মরমন সম্প্রদায়ের নারী সদস্য যিনি মার্কিন কংগ্রেসে আসন পেয়েছেন। ১৮২০ সালের দিকে নিউইয়র্কে মরমন সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। খ্রিষ্ট ধর্মের অন্যান্য অংশের তুলনায় মরমনদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা অনেকটা একপেশে অবস্থায় ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে মরমনরা রাজনীতিতে প্রবেশ করে ক্ষমতার চর্চা শুরু করলে পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যায়। উদাহরন হিসেবে ২০১২ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মিট রমনির কথা বলা যায়। তিনিও একজন মরমন সম্প্রদায়ের মানুষ।

২০১২ সালে তিন সন্তানের জননী মিয়া লাভ তামপা, ফ্লোরিডার কনভেনশনে বলেছিলেন যে তিনি সারাতোগা স্প্রিংসের মেয়র হবেন। এবং একই সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তার কিছু জায়গায় মিল আছে। তবে তিনি আগাগোড়াই ওবামার সমালোচনা করে বক্তব্য দিতেন। যেমন, ‘প্রেসিডেন্ট ওবামার আমেরিকা একটি খণ্ডিত আমেরিকা। উপার্জন, লৈঙ্গিক বৈষম্য এবং সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে আমাদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।’

মিয়া লাভের জন্ম ১৯৭৫ সালে ব্রুকলিনে। তার হাইতিয়ান বাবা-মা স্বৈরশাসক ফ্রাঙ্কোসিস দুভালিয়ারের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। একটা সময় মিয়া লাভ ক্যাথলিক থেকে মরমন মতে দীক্ষা গ্রহন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর তিনি প্রথমদিকে একটি বিমানে কাজ নেন, পরবর্তীতে তিনি একটি চার্চেও কাজ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি জ্যাসন লাভ নামের এক ব্যাক্তিতে বিয়ে করেন। রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পরেন মূলত ২০০৮-৯ সালের দিকে, তখন তিনি একটি কমিউনিটি রেডিওর মূখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন। সেখান থেকেই তিনি সিটি কাউন্সিলে যোগ দেন এবং ২০১০ সালে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে নিজ সম্প্রদায়ভুক্ত রাজনীতিবিদ মিট রমনির সহায়তায় তিনি প্রথমবারের মতো কংগ্রেসে পদ পাওয়ার লড়াইয়ে অংশগ্রহন করেন। কিন্তু সেসময় তিনি ডেমোক্রেট প্রার্থী জিম ম্যাথেসনের কাছে হেরে যান। কিন্তু ম্যাথেসন চলতি বছর অবসরে চলে যান। আর এই সময়ের মধ্যেই মিয়া লাভ ডেমোক্রেট প্রার্থী ডগ ওয়েনসকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দেন।

তিনি যে শুধু কৃষ্ণাঙ্গ নারী রিপাবলিকান তাই নয়। পাশাপাশি তিনি উটাহ অঙ্গরাজ্যের একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যেখানে মোট জনসংখ্যার এক শতাংশও ভালো করে কৃষ্ণাঙ্গ নয়। এছাড়াও মরমন চার্চের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারীও তিনি। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মরমন সম্প্রদায় কোনো কৃষ্ণাঙ্গকে চার্চের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে দিতো না। তবে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তৈরি হয় মূলত তার পিতা-মাতার কাছ থেকে। ২০১২ সালের রিপাবলিকান কনভেনশনে তিনি বলেন, ‘আমার পিতা-মাতা আমেরিকায় যখন আসেন তখন তাদের কাছে ছিল মাত্র দশ ডলার। কিন্তু তাদের মনে একটা বিশ্বাস ছিল যে তারা আমেরিকা সম্পর্কে যা শুনেছে তার সবই সঠিক।’

নিয়ামানুবর্তিতা, নিয়ন্ত্রিত সরকার এবং ব্যাক্তিগত দায়িত্ববোধই মিয়া লাভের জীবন দর্শনের মূল শর্ত। ওবামা সরকারের বিরুদ্ধে তিনি গোড়া থেকেই কথা বলে আসছেন। সাংবাদিকদের একবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ডেমোক্রেট পার্টিকে পছন্দ করি না। তারা চায় না আমি সেখানে যাই, কিন্তু আমি আসছি’।



মন্তব্য চালু নেই