মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা-ধর্ষণ করেছে রোহিঙ্গাদের
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
শুক্রবার(৩ ফেব্রুয়ারি) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
বৈশ্বিক এ সংস্থাটি বলছে, রাখাইনে অক্টোবর থেকে চালানো সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘প্রায়’ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এবং সম্ভবত রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে চেয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ জানিয়েছে, শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের হত্যা করা হয়েছে। সেনা অভিযানের সময় প্রাণভয়ে পলায়নরত সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিপুলসংখ্যক নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের খাবারের উৎস ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি-ঘর লুটপাট করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে স্কুল, দোকান, মসজিদ-মাদ্রাসা ও ফসলের ক্ষেত।
জাতিসংঘের তদন্তকারীদের কাছে একজন রোহিঙ্গা নারী অভিযোগ করেছেন, তার আট মাসের শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা কীভাবে ওই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, তার বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। ওই নারীর পাঁচ বছর বয়সী মেয়েশিশুকেও হত্যা করেছে সেনাসদস্যরা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা অবর্ণনীয়। যেসব এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান শেষ করেছে, সেই সব এলাকায় শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত অক্টোবরে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির সেনাদের হাতে নির্যাতনে শিকার হয়ে কয়েক লাখ লোক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শরণার্থী ইউএনএইচসিআর এর নিবন্ধন কার্ড নিয়েছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক শতাব্দি ধরে বসবাস করছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। শান্তির বাণি আওরানো বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মগরিা চালায় মিয়ানমার। এখনো মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়নি। গত কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন অজুহাতে মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের উপর নগ্ন হামলা চালিয়ে আসছে।
নির্যাতন সইতে না পেরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ক্যাম্পের বাইরে কত রোহিঙ্গা আছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই কোথাও।
মন্তব্য চালু নেই