রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ করছে মিয়ানমার সেনারা : অ্যামনেস্টি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নতুন এক প্রতিবেদনে বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী দেশটিতে বেআইনি হত্যাকাণ্ড, বহু ধর্ষণ, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।

রোহিঙ্গাবিরোধী এক অভিযানের অংশ হিসেবে তারা এ কাজ করছে এবং অ্যামনেস্টির মতে এসব কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ। খবর বিবিসির।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সেনা অভিযান এবং এই অভিযান থেকে পালিয়ে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে সোমবার ভোরবেলায় এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ এবং ভিডিও ও ছবির ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে অ্যামনেস্টি।

সংস্থাটির দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাবিষয়ক পরিচালক রাফেন্দি ডিজামিন বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক রোহিঙ্গাদের অনুভূতিহীন ও নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত করেছে। একটি সমন্বিত শাস্তির অংশ হিসেবে সেখানে পুরুষ, মহিলা, শিশু, পুরো পরিবার, পুরো গ্রামের ওপর হামলা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে।’

এই ইস্যুতে অং সান সু চি তার রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পুরো রাখাইন রাজ্যের আকাশে এ রকম হেলিকপ্টার গানশিপের টহল নাফ নদীর এপারে বাংলাদেশ থেকেও দেখা গেছে।

উদাহরণ হিসেবে ১২ নভেম্বরের একটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে, যেখানে বলা হয়, সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে মোতায়েন করা দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে নির্বিচারে গুলি চালায়, আতঙ্কে গ্রামবাসী পালাতে থাকে, এই হামলায় বহু সংখ্যক মানুষ মারা যায়, যাদের পরিচয় জানা যায়নি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অবশ্য রাখাইন রাজ্যে তাদের ভাষায় ‘বাঙালি’ দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, যারা গত ৯ অক্টোবর পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

এই সেনা অভিযানে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে প্রতিবেদন দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি, যদিও তারা নিহতের বাস্তব কোনো সংখ্যা নিরূপণ করতে পারেনি।

সেনাবাহিনী মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করেছে বলেও অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

সেনা সদস্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন, এমন কয়েকজন মহিলার সাক্ষাৎকারও নিয়েছে বলে জানাচ্ছে অ্যামনেস্টি।

৩২ বছর বয়স্ক এক মহিলার কথা তারা উল্লেখ করছে, যিনি বলছেন তাকে একটি ধানক্ষেতে টেনে নিয়ে গিয়ে তিনজন সেনাসদস্য তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। এ ছাড়া রয়েছে নির্বিচার গ্রেপ্তারের অভিযোগ। আটকের পর কারাগারগুলোতে তারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন নজিরও পাওয়া যাচ্ছে। আটক থাকা অবস্থায় অন্তত ছয়জন বন্দি নিহত হওয়ার খবর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমই স্বীকার করেছে। আটক করার সময়েও রোহিঙ্গাদের নির্দয়ভাবে পেটানো হয় বলে উল্লেখ করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।



মন্তব্য চালু নেই