মা দেখতে ভালো না তাই…

চীনের হাংঝাউ শহরের রাস্তায় বসে আকুলভাবে কাঁদছিলেন ডিং লিয়াং নামের এক বৃদ্ধা। কেননা নিজের একমাত্র ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি ৬৩ বছরের লিয়াং। তিনি ছেলের বাসা চেনেন না। আর ছেলেও মায়ের ফোন ধরছেন না। ছেলে নিজেই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চায় না। তাই সে ঠিকানা দেয়নি। দেখতে বিশ্রী হওয়ায় দরিদ্র মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে সেই কবে। কী বিশ্বাস হচ্ছে না, তাহলে পুরোটা শুনুন।

ছেলের ঘরে নাতি হয়েছে এ খবর শুনে খুশিতে আটখানা লিয়াং। নাতির জন্য উপহার তৈরি করলেন। তারপর বাক্স পেটরা গুছিয়ে রওয়ানা দিলেন হাংঝাউ শহরের দিকে। বাসে পাঁচঘণ্টা ভ্রমণ করে পৌঁছুলেন শহরে। ভাবছিলেন, এবার হয়ত পুত্রের মন গলবে। কেননা সে নিজেও যে সন্তানের বাবা হয়েছেন। শহরে পৌঁছে ফোন দিলেন ছেলেকে।কিন্তু সে ফোন ধরলো না। ছেলের বাড়ির ঠিকানা যানা নেই বৃদ্ধার। কী করে পৌঁছাবেন ছেলের বাড়ি, এক নজর দেখবেন নাতিকে? এই কষ্টে রাস্তায় বসেই কান্না শুরু করলেন।

তিনি যে বাড়িটির সামনে বসে কাঁদছিলেন সেই বাড়ির মালিকের নাম হাসিন পাই(৫৩)। স্থানীয় ওই ভদ্রলোক লিয়াংয়ের দুঃখের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। এও কী সম্ভব! তখন তিনি বৃদ্ধাকে স্থানীয় টিভি স্টেশনে নিয়ে গেলেন। টেলিভিশনে তার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর গোটা চীনে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনেকে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন।

লিয়াংয়ের বাড়ি হাংঝাউ প্রদেশের এক গ্রামাঞ্চলে। তার একটি মাত্র ছেলে। ছেলেকে নিয়ে তার গর্বের সীমা নাই-কতইনা রঙিন স্বপ্ন দেখেন। ছেলে বড় হয়ে এই হবে সেই হবে। স্বপ্নের সুতো ছড়াতে ছড়াতে ছেলে বড় হয়। ভালোভাবে স্কুল পাস করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে। সেখান থেকে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করে ভালো চাকুরি পায়। এরপর পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করে। এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সমস্যা হল বিয়ের দিন। গরীব মা নিজের পুরনো পোশাক পরে এসেছেন ছেলের বিয়েতে। কৃষানী মাকে দেখে ছেলে লজ্জায় বাঁচে না। যেন ধূলায় লুটিয়ে পড়ে আর কি! এরপর থেকে সে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এতেও আপত্তি ছিল না মা লিয়াংয়ের। তিনি বলেন,‘ আমি কিছু মনে করিনি। কারণ আমি জানি ছেলে অনেক বড় হয়েছে। তার নিজস্ব জগত তৈরি হয়েছে। আমার সঙ্গে কথা বলার সময় ওর নেই। আমিই মাঝে মাঝে ফোন করতাম। একদিন ও জানাল আমার নাতি হয়েছে। আমার তো ওকে দেখতে খুব ইচ্ছে হল। নাতির জন্য কিছু উপহার কিনলাম।’

কিন্তু মা তার বাড়িতে আসতে চান এ কথা শুনে রেগে গেল ছেলে। মায়ের মুখের ওপর বলল,‘খবরদার তুমি আমার বাড়িতে এসোনা। তুমি খুব কুৎসীৎ। তোমাকে দেখলে এখানে আমি ভীষণ লজ্জায় পড়ব।’

কিন্তু মায়ের মন মানে না। নাতিকে একবার চোখের দেখা দেখতে তার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠল। তাই একদিন ভোর চারটায় বাসে ওঠে বসলেন।শহরে পৌঁছে তিনি ছেলেকে ফোন করলেন। কিন্তু তার ৩২ বছরের ছেলেটি মায়ের ফোন ধরল না। এখন কীভাবে যাবেন তিনি ছেলের বাসায়, তার যে ঠিকানা জানা নেই? তখন মনের দুঃখে রাস্তায় বসে কাঁদতে শুরু করেন দুখিনী মা।

এ প্রসঙ্গে লিয়াং বলেন,‘আমি সকাল চারটায় বাসে উঠেছি।সকাল নয়টার দিকে শহরে এসে পৌঁছাই। তখন থেকে আমি সারাদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। বার বার ছেলেকে ফোন করছি। কিন্তু সে যে আমার ফোন ধরছে না।’ তার স্বামী তাকে আসতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন,‘ আমার ছেলের বৌয়ের বাচ্চা হয়েছে আর আমি যাব না। কী বল তুমি!’

লিয়াং যখন টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখনও তার হাতে ধরা ছিল নাতির জন্য আনা জামাগুলো। এগুলো তিনি নিজেই তৈরি করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই