মসজিদ, স্কুল, হাসপাতালে হামলা, নিহত ছয় শতাধিক

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরাইলের হামলা অব্যাহত আছে৷ স্থলভাগ, আকাশপথ, নৌপথ সব দিক থেকেই চলছে বিরামহীন হামলা৷ হামলায় মৃতের সংখ্যা ছয় শতাধিক৷

দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা দুপক্ষের সংঘর্ষে ফিলিস্তিনে অন্তত ৫৮৩ জন নিহত হয়েছে৷ ইসরাইলের দাবি হামাসের হামলায় ২৭ ইসরাইলি সেনা ও দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে৷

স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রতি মুহূর্তে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল৷ বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির কোনো স্থানই৷ সব সীমান্ত বন্ধ থাকায় একরকম ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ মানুষদের৷ ইসরাইলি হামলায় অন্তত চার হাজার মানুষ আহত হয়েছে বলে জানান তিনি৷ মঙ্গলবার ভোরেও নিহত হয়েছে আরো ২৩ জন৷ অন্তত একলাখ মানুষ নিজেদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ কিন্তু নিরাপদ আশ্রয় বলতে গাজায় কোনো স্থান নেই৷ ৬৯টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে বেশিরভাগ মানুষ৷ কিন্তু সর্বত্রই চলছে গোলা হামলা৷

গাজার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার রাতভর পাঁচটি মসজিদ, একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং হামাসের সাবেক সেনাপ্রধানের বাড়িসহ ১১৩টি স্থাপনা লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী৷ তবে সেসময় ঐসব স্থানে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷

কেরির বৈঠক
এদিকে গাজায় সাধারণ মানুষের ওপর যখন এই নির্মম হামলা চলছে, তখন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি কায়রোতে বৈঠকে বসেছিলেন৷ জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় যত মানুষ নিহত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ এবং এর মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে৷ বান কি মুন বলেন, ‘‘দুপক্ষেরই উচিত এই মুহূর্তে হামলা বন্ধ করা৷” জন কেরি বলেছেন, ‘‘হামাসের সিদ্ধান্তের উপরই সবকিছু নির্ভর করছে৷ তারাই পারে এই নিরীহ মানুষগুলোকে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করতে৷” সেই সাথে ওবামার মতো তিনিও বলেন, ‘‘ইসরাইলের অধিকার আছে হামাসের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করার৷” গাজায় সৃষ্ট মানবিক সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র চার কোটি সাত লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে বলে জানান তিনি৷

হামাস নেতা ও আব্বাসের বৈঠক
গাজা সীমান্তে প্রায় আট বছর আগে সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরাইল৷ হামাসের দাবি ইসরাইলকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে৷ হামাস নেতা খালেদ মেশাল এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সোমবার দোহায় বৈঠক করেছেন৷ দুপক্ষের অস্ত্রবিরতির জন্য হামাস ও আব্বাস একসাথে কাজ করবেন বলে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন আব্বাসের এক মুখপাত্র৷

অন্যদিকে, গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া সোমবার বলেছেন, ‘‘গাজার ১৭ লাখ মানুষ হামাসের সাথে আছে এবং তারা চায় ইসরাইল যাতে সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়৷” তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা আর পিছনে ফিরে তাকাবো না৷ তিলে তিলে মরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই৷ গাজার মানুষ তাদের রক্ত দিয়ে হলেও এই অবরোধ তুলে ক্ষান্ত হবে৷”

গাজার মানুষের এখন একমাত্র পালিয়ে যাওয়ার পথ রাফা সীমান্ত দিয়ে মিশরে প্রবেশ করা৷ কিন্তু গত বছর থেকেই সেই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে মিশর৷ অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা, মুসলিম হজ যাত্রী এবং বিদেশি পার্সপোর্ট আছে এমন ব্যক্তিদের কেবল প্রবেশের অনুমতি দিত তারা৷

অব্যাহত হামলা
মঙ্গলবার সকালে গাজার পূর্ব সীমান্তে ট্যাঙ্কের হামলায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে৷ ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলি নৌবাহিনীর ছোড়া গোলার আঘাতে ১৯টি জেলে নৌকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ গাজার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘সোমবার রাতে একটি বাড়িতে গোলা হামলায় একই পরিবারের তিন নারী নিহত হন৷”



মন্তব্য চালু নেই