‘মন্ত্রীরাও শিক্ষক নিয়োগের লেনদেনে জড়িত’

‘ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মন্ত্রীরাও এ ধরনের লেনদেনের সঙ্গে জড়িত’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আমাদের সমাজে ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের লেনদেনের সরাসরি অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বার্থে শিক্ষাকে এ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যেখানে লেনদেনের সুযোগ কম থাকবে।’

রাজধানীর পলাশীর ব্যানবেইস সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে শিক্ষক, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ টাকা দেই আমরা, কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ আমাদের হাতে নেই।’

‘মন্ত্রীরাও এ ধরনের লেনদেনের সঙ্গে জড়িত’— এমন ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন পদ্ধতি যে কার্যকর হবে, সেজন্য আমাদেরও স্বচ্ছ হতে হবে। তা না হলে কোনো লাভ হবে না। কারণ আমরা মন্ত্রীরাও ঘুষ নিয়ে কোনো শিক্ষককে নিয়োগ দেই, তখন সেই শিক্ষক ঘুষের লাখ লাখ টাকা তোলার চাপে থাকে। ফলে তার পক্ষে শিক্ষাদান সম্ভব হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আগে প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সিনিয়রদের বিবেচনা করতাম, আবার উপরেরও চাপ থাকতো। কিন্তু এটা পরিবর্তন করে দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।’

‘পরিবর্তিত পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির হাতে থাকবে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে গভর্নিং বডির ক্ষমতা কমে যাবে, এ ধারণা পোষণ করার কিছু নেই। কারণ শিক্ষক নিয়োগ করাই গভর্নিং বডির কাজ নয়, প্রতিষ্ঠানের গুণগতমান বৃদ্ধি করার অনেক কাজ রয়েছে তাদের। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির ক্ষমতা, স্বার্থ, প্রতিযোগিতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষার মান উন্নয়ন।’

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সংখ্যাগত উন্নতি হয়েছে, কিন্তু গুণগতমান বৃদ্ধি পায়নি। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ছাত্ররা নয়, শিক্ষকরাও যা করছেন তা লজ্জাজনক। তাই জ্ঞানের সঙ্গে বিবেকেরও সমন্বয় ঘটাতে হবে।’

সম্প্রতি একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির টাকার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে ধরে অনুষ্ঠানে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘টাকার মাধ্যমে শিক্ষক হওয়ার ফলে শিক্ষকদের উপর এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে তা রোধে আমাদের তেমন কিছু করার নেই, তাই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়মে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়ে তার তালিকা ডাটাবেইজ সিস্টেমে রাখা হবে। উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগ অনুযায়ী এটা হতে পারে। পাশাপাশি কেবল রিটেন নয়, শিক্ষক প্রার্থীদের ভাইভায়ও উত্তীর্ণ হতে হবে।’

কর্মশালায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ এখন মানি মেকিং মেশিন হয়ে গেছে। তাই পরিবর্তিত নিয়ম বাস্তবায়ন কঠিন হবে। কারণ এখানে সবার ইন্টারেস্ট তৈরি হয়েছে। তবে যে কোনো মূল্যে এটা পরিবর্তন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মানির জন্য অনেক কাজ আছে, কিন্তু এ আশা নিয়ে শিক্ষায় আসবেন না। কারণ বর্তমানে গভর্নিং বডি নিয়ে প্রচুর মামলা চলছে। এর অধিকাংশই দলীয় কর্মীদের বিভাজন, তাদের লক্ষ্য কিভাবে চেয়ারম্যান হবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি টাঙ্গাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা আমার নামে চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা শুধু কলেজে না, বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে।’

কর্মশালায় বিষয়বস্তুর উপর উপস্থাপনায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান আশীষ কুমার সরকার বলেন, ‘নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রার্থীর বয়স কত হবে, পূর্বে নিবন্ধন সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ‍শিক্ষকদের কি হবে, এলাকার বিভাজন কিভাবে হবে, গভর্নিং বডির ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে সুপারিশ প্রয়োজন। শীঘ্রই অনলাইনে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে, তাতে সবাই মতামত দিতে পারবেন।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।



মন্তব্য চালু নেই