মির্জাপুরে এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি মহাসড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর নির্দেশের ৯ মাস পরও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গ বন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হয়নি। মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের অধিক ক্ষতি পূরণ পেতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী দুইপাশের জমিতে অবৈধ ঘর নির্মিত হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পূর্বপাড় এলেঙ্গা পর্যন্ত ৪ লেন ৭০ কিঃমিঃ মহাসড়ক কাজের শুরুর আগেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ কাঁচা ধান ক্ষেত, ডোবা-পুকুর ও নিচু জমিতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে টিনের চালের ঘর নির্মাণ করেছেন। প্রকল্পের ভুমি জরিপ কাজে নিয়োজিত এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় দালাল চক্রের যোগ সাজসে অধিক ক্ষতিপুরণ পেতে অর্থলোভী একটি চক্র অবৈধভাবেই নিচু জমিতে এসব টিনের ঘর ও আধাকাঁচা ঘর নির্মান করে চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই দালাল চক্রটি নিরীহ জমির মালিকদের নানা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জমি ভাড়া নিয়ে রাতারাতি এই ঘর নির্মান করছে বলে জানা গেছে।

গত বছরের ১৩ আগষ্ট বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী মোঃ ওবায়দুল কাদের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে মহাসড়কের দুইপাশ পরিদর্শনে এসে ঘটনার সত্যতা পান। তিনি মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ অফিসে বসে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রশাসনকে অবৈধ এসব স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন । কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশের ৯ মাস পার হলেও রহস্য জনক কারনে এসব স্থাপনা ভাঙা হয়নি। আজ শুক্রবার এই মহসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

মির্জাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) অফিসার সেলিম রেজা জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন করার জন্য সরকার নীতিগত সিন্ধান্ত নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মির্জাপুর উপজেলার ক্যাডেট কলেজ এলাকা থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক, ওপেন ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ও আবুধাবী ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তায় এ মহাসড়কের চার লেন উন্নিত করনের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের অধিনে মহাসড়কের দুইপাশে গাজীপুর জেলা ও টাঙ্গাইল জেলার ৮৭ দশমিক ৫১৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রনালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে সুক্রটি জানায়।

ঐ জমির মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা অংশের জমি পড়েছে ২৩ দশমিক ৭৬৮৯ একর । আর এই জমিগুলি হচ্ছে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, হাটুভাঙ্গা, গোড়াই, নাজিরপাড়া, সোহাগপাড়া, ধেরুয়া, দেওহাটা,বাওয়ার কুমারজানী, মির্জাপুর বাইপাস, পুষ্টকামুরী, নয়াপাড়া, ইচাইল, কুরনি, ধল্লা, শুভুল্লা, পাকুল্লা ও জামুর্কি মৌজা ।

এলাকাবাসীদের সুত্রে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণের খবর শুনে কিছু অসাধু চক্র যোগাযোগ মন্ত্রনালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চার লেন প্রকল্পের কিছু দুনীতিবাজ চক্র এবং স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ঐ সব জমির উপর অবৈধভাবে টিনের ঘর নির্মান শুরু করেছে। দুর্নীতিবাজ এই চক্রটি জমি ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে নির্মান করছে এসব স্থাপনা । জমির মালিক এবং দালাল চক্র অধিক ক্ষতিপুরণ পেতে রাতারাতি ভাবে অতি নিম্নমান উপায়ে ঘরবাড়ি নির্মান করে চলেছে। কেউ লম্বালম্বি ভাবে চাল দিয়ে ঘর নির্মান আবার কেউ বা আধাপাকা আবার কেউ বা পাকা ঘর নির্মান করেছে। তবে চিকন রড ও নিম্নমানের ইট দিয়ে ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে এসব ঘর নির্মান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এসব স্থাপনা রাতারাতি ভাবে ডোবা-পুকুর, নিচু জমি ও কাঁচা ধান কেটে নির্মানের হিড়িক পড়েছে। অধিক ক্ষতিপুরণ পেতে এসব স্থাপনার সামনে বিভিন্ন কল-কারখানার সাইন বোর্ড ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা এসব স্থাপনা নির্মান করছে তাদের বাড়ি গাজীপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, ফরিদপুর, বগুড়া,ঢাকাসহ ও বিভিন্ন জেলায়। যোগাযোগ মন্ত্রনালয়,সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজস করেই অধিক ক্ষতিপুরন পেতে দালাল চক্রটি অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মান করে চলেছে। ফলে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল রোডের ৪ লেন নির্মানের কাজ হবে কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে।

মির্জাপুর ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যারা এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মান করছে তা জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাসত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯০ ধারার পরিপনথি। তাই তারা অবৈধ স্থাপনার কোন টাকা পাবে না। এই চক্রের সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী এলাকাবাসির।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সহযোগিতায় অচিরেই এসব স্থাপনার ভাঙ্গার কাজ শূরু হবে।

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, সরকারের ভাবমুর্তি বিনষ্ট করার জন্য একটি চক্র মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মান করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরী।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ নাজমূল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অচিরেই এসব অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই