ভয়ংকর ১০ নারী গ্যাংস্টার
ম্যাকেয়াভেলির রাষ্ট্রদর্শণের অন্যতম উপাদান হলো কারাগার। প্রতিটি রাষ্ট্রেই তাই আমরা অবধারিতভাবে কারাগারের উপস্থিতি দেখতে পাই। প্রত্যেক কারাগারেই নিশ্চিতভাবে পুরুষ অপরাধীর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তাই বলে যদি কেউ ভাবেন যে, নারীদের ভেতর অপরাধের প্রবণতা কম তাহলে ভুল ভাবছেন। এমনওতো হতে পারে, আপনি-আপনি জানি না বলেই অপরাধ জগতের গ্যাংস্টার বলতে আমরা শুধু পুরুষদেরই বুঝি। কিন্তু আজ আমরা এমন দশ জন নারীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো যারা তাদের সময়সাময়িক পুরুষ গ্যাংস্টারদের তুলনায় কম ভয়ংকরতো ছিলেনই না, বরংচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছিলেন চূড়ান্ত্র মাত্রার বিপদজনক।
বনি পার্কার
বনি এলিজাবেথ পার্কারের জন্ম ১৯৩৪ সালে টেক্সাসে। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। মাত্র চার বছর বয়সেই বাবা মারা যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে তাদের বিভিন্ন স্থানে জীবিকার সন্ধানে ঘুরতে হয়। পরবর্তী সময়ে রয় থর্টন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ও বিবাহ হয়। এই বিবাহ পরবর্তী সময়েই অপরাধ জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক হয়ে বনি পার্কারের এবং তৎকালীন টেক্সাসে আইনের ফাঁক গলে অনেক কুকর্ম ঘটিয়েছেন তিনি।
স্টেফানি সেন্ট ক্লেয়ার
স্টেফানি নিউইয়র্কের কুখ্যাত হারলেম গ্যাংয়ের নেতা ছিলেন। দাবি করা হয় তার জন্ম হয়েছিল ফ্রেঞ্চ মা এবং আফ্রিকান বাবার ঘরে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসার পর মোট চল্লিশ জনের একটি চোর দলের সর্দার হন তিনি। স্টেফানি প্রকাশ্যেই পুলিশদের ঘুষ দিতেন এবং পরবর্তীতে পত্রিকায় ওই পুলিশদেরই ঘুষ গ্রহনের চিত্র ছাপিয়ে দিতেন। বহু অপরাধের জন্য স্টেফানির মাথার মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল তৎকালীন সময়ে।
আরলেইন ব্রিকম্যান
নিউইয়র্কে জন্মগ্রহন করা ব্রিকম্যান কৈশোরেই যুক্ত হন একটি ইতালিয়ান গ্যাংয়ের দলে। এই গ্যাংয়ে যোগ দেয়ার পর বেশিরভাগ সময়ই তিনি কাটাতেন মাফিয়াদের বিভিন্ন নাইটক্লাবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেই সবচেয়ে বড় মাদক চোরাচালান দলের সর্দার হয়ে যান। কিন্তু যখনই তিনি তার আট বছর বয়সী মেয়েকে হত্যার হুমকি পান, তখন থেকেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন। তৎকালীন সময়ে গোটা নিউইয়র্কে তার বিরুদ্ধে কথা বা দাড়াতে পারে এমন কোনো মাফিয়া বা গ্যাংস্টার দাড়াতেই পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই ভয়বহ কায়দায় হত্যা করেছিলেন তিনি।
ক্যারেন হিল
স্বামীর হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেছিলেন ক্যারেন। স্বামী লুসি ক্রাইম ফ্যামিলির অংশ হওয়ায় খুব সহজেই তিনি এই ফ্যামিলিতে প্রবেশ করতে পারেন। বিবাহের পর নবদম্পতি ভয়াবহ কিছু অপরাধ করেন এবং গোটা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এফবিআইয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং বিভিন্ন গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে পুলিশকে সহায়তা করেন।
ম্যাক ট্রাক
ওপেল লং ছিলেন তেমনই একজন নারী যার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে দরকার হতো প্রচণ্ড সাহস। ওপেলের নৃশংসতার জন্য একটা সময় তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘ম্যাক ট্রাক’। স্বামী রাসেল ক্লার্ক দিলিঙ্গার গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ায় তিনিও ওই গ্যাংয়েই জড়িয়ে যান। তবে দৃশ্যত, ম্যাক ছিলেন গ্যাংয়ের রন্ধন শিল্পী। গ্যাংয়ের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই জানতেন না যে, যে কাজ গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরা করতে হিমশিম খেতেন তা অবলীলায় করতেন ম্যাক ট্রাক।
হেলেন জিলিস
‘বেবি ফেস নেলসন’ গ্যাংয়ের সদস্য লেস্টারের স্ত্রী ছিলেন হেলেন জিলিস। তার সময়ে তিনি ছিলেন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। স্বামী-স্ত্রী মিলে জন দিলিঙ্গারের হয়ে অনেক অপকর্ম করলেও বিভিন্ন গ্যাংদের মধ্যে এই দম্পতি ছিলেন আদর্শ। তাই মৃত্যুর পরেও হেলেন জিলিসকে তার স্বামীর পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। মোট পঞ্চাশ বছর ধরে তারা একসঙ্গে জীবনযাপন করেছিলেন।
মা বার্কার
মা বার্কার ছিলেন ইতিহাস খ্যাত কয়েকজন অপরাধীর মা এবং বার্কার গ্যাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। মা হিসেবে তিনি তার সন্তানদের প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে থাকতেন এবং তাদের নির্দেশনা দিতেন। যদিও একটা সময় এফবিআই’র এক সদস্যের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন মা বার্কার। তার চার সন্তানের মধ্যে হ্যারম্যান, লয়েড, ফ্রেড এবং আর্থার। সন্তানদের নিয়ে অপরাধ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত মা বার্কারের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করেছিলেন।
পার্ল এলিয়ট
১৯৩৩ সালে শিকাগো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের রেকর্ড অনুযায়ী, তৎকালীন সময়কার গ্যাংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সংঘবদ্ধ গ্যাং ছিল পার্ল এলিয়টের গ্যাং। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হত্যাকাণ্ড এবং অপরাধের জন্য পুলিশ তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছিল। তবে পার্ল এলিয়ট তার জীবনের এক সময়ে দিলিঙ্গার গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, দিলিঙ্গার গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরেই পার্ল এলিয়টের দিন শেষ হয়ে আসতে শুরু করে।
রোসেত্তা কিউতোলো
নুভা কামোরা নামক সংগঠনের নেতা রাফায়েল কিউতোলোর বোন ছিলেন রোসেত্তা কিউতোলো। তিনি তার ভাইকে কারগার থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছিল। তার আমলে গ্যাংটি কয়েক বিলিয়ন লিরা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। একটা সময় আসে যখন রোসেত্তা তার ভাইয়ের হয়ে গ্যাংয়ে অনেক নির্দেশ দিতেন।
গ্রিসেল্ডা ব্ল্যাঙ্কো
গ্রিসেল্ডা ছিলেন মেডেলিন কার্টেলের অন্যতম মাদক চোরাচালানি। ১১ বছর বয়সেই তিনি শিশু অপহরণের মতো অপরাধে জড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সেই ডাকসাইটে পকেটমার হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে যায়। গ্রিসেল্ডা তার মায়ের সঙ্গে না থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় স্বামীর সহায়তায় নিউইয়র্কে তিনি কোকেন ব্যবসা শুরু করেন।
মন্তব্য চালু নেই