বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
কারচুপি, ভোট বর্জন, অনিময় ও গোলযোগের মধ্যে দিয়ে প্রথম ধাপের ৭১৭ ইউনিয়ন পরিষদ (ই্উপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হয়েছে ভোট গণনা। দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃণমূলের ইউপি নির্বাচন। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ করেছে বিএনপিসহ অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকটি দল। জাতীয় পার্টি ইসিতে এসে কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপির অভিযোগ করে গেছে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। বিভিন্ন গোলযোগ ও অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল থেকে বিভাগওয়ারি ইউপি’র ভোটের খোঁজ খবর নিয়েছেন চার নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ ঢাকা ও ময়মনসিংহ, আবদুল মোবারক রংপুর ও রাজশাহী, জাবেদ আলী সিলেট ও চট্টগ্রাম এবং শাহনেওয়াজ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ভোট পরিস্থিতি মনিটরিং করেছেন।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট ছিল বলে ইউপি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তারা উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরেছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যেতে থাকে ভোটের চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাড়তে থাকে সহিংসতা। কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির অভিযোগে একের পর এক কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও ভোটাররা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। তাদের অভিযোগ, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ব্যালট পেপারে অবাধে সিল মারতে দেখা গেছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টির মতো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বিকেল ৪টার পর এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে।
সারাদিনের ভোটের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘ভোটের আগে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সেটুকু সহিংসতার শঙ্কার কথা বলা হয়েছে, আসলে ততটা হয়নি। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সবখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশালের একাংশ ও নোয়াখালী এলাকার কিছু জায়গায় সংঘর্ষ-গোলযোগ হয়েছে।’
এরই মধ্যে বিএনপি’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপি ভোটে ইসির ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিতে পারে, আমরা এ নিয়ে মন্তব্য করবো না। যেসব অভিযোগ পাচ্ছি, সারবত্তা থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
প্রথম ধাপের শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি, জাল ভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি। পৌরসভার মতো ইউপি নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না বলে মনে করছে দলটি।
এর আগে নির্বাচনী তফসিলে প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় বাতিল হয়েছে ও পিছিয়ে গেছে ৩১টির ভোট। ২২ মার্চ ৭১৭ ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে মোট ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী প্রথম ধাপের ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নির্বাচনে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৭১৭ জন, বিএনপির ৬১৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ২৪৬ জন।
উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে ৭ হাজার ৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন। প্রথম ধাপে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ছিল ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন।
মন্তব্য চালু নেই