বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। জুহেল মিয়া নামের ওই নাগরিক যুক্তরাজ্যে ওয়েলসের একটি বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক।

বৈধ ভিসাসহ আনুষ্ঠানিক সব কাজ সম্পন্ন করে নিউইয়র্ক যাওয়ার জন্য বিমানে চেপে বসেছিলেন ২৫ বছর বয়সী জুহেল। কিন্তু কোনো কারণ ব্যাখ্যা ছাড়াই তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আইসল্যান্ডের রিকজাভিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো ওই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান জুহেল মিয়ার জন্ম ওয়েলসের সোয়ানিসতে। তিনি ওয়েলসের নেথ পোর্ট টালবোট এলাকার ল্যানগেটগ কম্প্রিহেনসিভ স্কুলের শিক্ষক। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি আইসল্যান্ডে শিক্ষা ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের নিউইয়র্কে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাধা দেওয়ায় জুহেলকে ছেড়েই অন্যরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৭ জানুয়ারি এক বিতর্কিত নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি মার্কিন আদালতে ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু ওই সাত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য সরকার এক বিবৃতিতে আশ্বস্ত করেছিল যে, জন্ম যে দেশেই হোক ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবেন না। যুক্তরাজ্য সরকারের এই ঘোষণার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে।

জুহেল মিয়া জানান, বিমানবন্দরে চেক ইন করার সময় তার পাসপোর্ট দেখেই বলা হয় যে, তাকে নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি করা হবে। এরপর আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে তার জিনিসপত্র ও পুরো শরীর তল্লাশি করা হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে চলে ওই তল্লাশি। এরপর তাকে বিমানে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের নিয়ে বিমানে ওঠেন। বিমান ওড়ার কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী গিয়ে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনে। তাকে শুধু বলা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না।

জুহেল আরও বলেন, ‘যখন আমি কেবিন থেকে আমার ব্যাগ নিচ্ছিলাম, তখন সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। পুরো বিমানে সুনসান নীরবতা। সঙ্গে থাকা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারছিল না কি করবে। মনে হয়েছিল আমি যেন একজন সন্ত্রাসী।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুহেলকে বিমান থেকে নামিয়ে আনার পর দুই ঘণ্টা তাকে একটি হোটেলে রাখা হয়। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইসল্যান্ডে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকেও কোনো সাহায্য পাননি তিনি। অবশেষে পরদিন তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে যান।

জুহেলকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদাতা নিথ পোর্ট টালবোট কাউন্সিল লন্ডনের মার্কিন দূতাবাসের কাছে এই ঘটনায় ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। তারা জানতে চান, জুহেল মিয়ার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে এতে তারা বিস্মিত। কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র ঘটনাটিকে অন্যায় এবং বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বলেন, জুহেল মিয়া একজন ব্রিটিশ নাগরিক। এ ছাড়া ভিন্ন কোনো দেশের নাগরিকত্ব তার নেই।

এ ঘটনায় ওয়েলসের স্থানীয় রাজনীতিকেরাও ব্রিটিশ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই