বনভূমি রক্ষা একটি লাঠি দিয়ে-ই!
ক্রমশ পৃথিবীতে কমে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ বনভূমি। বনাঞ্চল ধ্বংস করার মতো অসচেতনতা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে। আমরা অনেকেই এই বিষয় নিয়ে সচরাচর চিন্তাই করি না। অথচ ৬৭ বছরের এক প্রবীন ৩৫ বছর ধরে একটি ক্যাম্পেইন করছেন বনভূমি, বন্যজীবন এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশকে রক্ষার জন্য। তার এই কাজের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রচুর সবুজ বৃক্ষ এবং বনভূমি সৃষ্টি করা। এই প্রবীণ ব্যক্তিটি হলেন ভারতের বাসতার অঞ্চলের দামোদর কাশ্যপ।
‘গ্রামে যখন বিভিন্ন অঞ্চলে গাছ কেটে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে তখন আমি খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি এই ভেবে যে, ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়ত সবুজ বনভূমিই আর দেখতে পাবে না। তখনই আমি বনভূমি রক্ষার জন্য লড়াই শুরু করি’। কাশ্যপের এই বক্তব্যের রেশ ধরেই আমরা বুঝতে পারি তার পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা আর প্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধ। তবে এই কাজ তার একার পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না।
এই কাজে দামোদর একটি লাঠিকে আরাধনার প্রতীক তৈরী করেছেন, যার নাম দিয়েছেন তিনি ‘থেনগাপল্লী’। এই থেনপাপল্লী দিয়েই গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে বেড়ান তিনি। কাশ্যপের সঙ্গে সবসময় থাকা এই লাঠি নিয়েই তিনি গ্রামে গ্রামে বনায়নের সচেতনতা ছড়িয়ে দেন। ধীরে ধীরে তার থেনগাপল্লী একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন গ্রামে। এটি স্থানীয়দের কাছে একটি আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং ১৫ টি প্রতিবেশী গ্রামেও তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। তার মতে গ্রামের সবার উচিত বনায়নে অংশগ্রহণ করা এবং বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া। কাশ্যপ অবশ্য একটি বনের মধ্যে ৩৭০ একর জমিকে উপবনে রুপান্তর করেছেন। একশ একর জমি জুড়ে রয়েছে শ’খানেক ঔষধি গাছসহ অন্যান্য গাছ। এর সঙ্গেই রয়েছে মাওলি মাতা নামে ধর্মীয় একটি মন্দির।
বৃক্ষরোপন এবং প্রাকৃতিক উন্নয়নের জন্য কশ্যপকে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক পল কে ফাউন্ডেশন থেকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। যদিও পুরস্কার গ্রহনের জন্য তিনি শেষমেষ আর সুইজারল্যান্ডে যাননি। এবিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সুইস ফাউন্ডেশনকে বলেছি আমাকে আমার নিজের দেশে আমার নিজের লোকদের মধ্যে এই সম্মান প্রদান করা উচিৎ। এর ফলে আমার দেশের লোকেরা আরো প্রভাবিত হবে।’
কাশ্যপের উদ্যোগে গ্রামবাসীরা এখন বনভূমির প্রয়োজন বুঝতে পেরে এখন তারা নিজেদের জীবন ও জীবিকার জন্যই বনভূমি সৃষ্টিতে আগ্রহী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যারা গাছ কাটবে তাদেরকে ৫০০ টাকা জরিমানাও দিতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই